মাছ চাষে স্বাবলম্বী এক নারী

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা:
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত (রৌপ্য পদক জয়ী) মাছচাষি খায়রুন নাহার। বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ী ইউনিয়নের মহেশ্চাতুল গ্রামে। একজন নারী হয়েও মাছ চাষে সফল হতে তিনি করে চলেছেন কঠোর পরিশ্রম। সফলতাও পেয়েছেন। নিজে সফল হলেও দমে নেই তিনি। মাছ চাষে গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে ছুটে চলেছেন নিরন্তর। প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় সম্প্রতি সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। খায়রুনের এই উদ্যোগ দেখে অবাক বনে গেছেন গ্রামের মানুষ। সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষে সফলতা অর্জন করেছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে তার মাছ চাষের প্রজেক্ট। মাছচাষি খায়রুন নাহারের নতুন প্রজেক্ট এলাকা উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের বড়ডাংড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ৫০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন খায়রুন নাহার। মাছ চাষে পানি প্রয়োজন হলেও এলাকাটিতে বিদ্যুৎ নেই।

খায়রুন নাহার জানান, বিদ্যুৎবিহীন অনুন্নত গ্রামটিতে তিনি মাছ চাষের প্রকল্প শুরু করেছেন। সেচের প্রয়োজন হলেও বিদ্যুৎ না থাকায় সেচ দিতে পারছিলেন না। ওই অবস্থায় তার নিজ প্রতিষ্ঠিত সৃষ্টি মৎস্য ফেয়ার হ্যাচারির উদ্যোগে ভারত ও জাপানি প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুই দেশ থেকে সরঞ্জাম এনে জাপানি ও ভারতীয় প্রকৌশলী এনে মাছ চাষে সেচের জন্য সোলার প্যানেল স্থাপন করেছেন। মোট ১৬টি প্যানেল স্থাপন করলেও ১৫টি প্যানেলের মাধ্যমে তার ফিশারিতে সাড়ে পাঁচ ঘোড়া মোটর দিয়ে পানি দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। প্যানেলটি স্থাপনে তার ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকা। সূর্যের আলোতে একটানা প্যানেল দিয়ে ১০ ঘণ্টা সেচ দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আর এতে যদি ব্যাটারি স্থাপন করেন তাহলে ২৪ ঘণ্টাই একটানা সেচ দেওয়া যাবে।

খায়রুন নাহার বলেন, সোলারে সেচ দিয়ে মাছ চাষ কার্যক্রম চালু করায় স্থানীয় কৃষকরা আশায় বুক বেঁধেছেন। সেচের অভাবে তাদের জমি আর অনাবাদি থাকবে না। তিনি বলেন, তার সোলার সেচ থেকে গ্রামের কৃষকদের জমি চাষের জন্য পানি দেওয়া হবে এবং মাছ চাষ করার জন্য কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে।

মাছ চাষে অসামান্য অবদানের জন্য খায়রুন নাহার জাতীয় পুরস্কার হিসেবে রৌপ্য পদক পান ২০১৫ সালে। খায়রুন নাহারের স্বামী আবুল কালাম আজাদ স্ত্রীর সঙ্গে তার সব কাজে সহযোগিতা করেন। তাদের কোনো সন্তান নেই। সোনালী ব্যাংকের এসএমই ঋণ নিয়ে গত সাত বছর ধরে মাছ চাষে লড়াই করে সফল হয়েছেন খায়রুন নাহার। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম সানোয়ার রাসেল বলেন, গ্রামটিতে বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি। সেখানে মাছ চাষের জন্য সেচের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু খায়রুন নাহার বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে তার প্রকল্প এলাকায় সোলার স্থাপন করে এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সোলার দিয়ে সেচ চালু করা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: