সঠিক নিয়মে সুপারী চাষ পদ্ধতি ও সফল চাষীর গল্প (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুপারী বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে অন্যতম। অতি প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষ পানের সাথে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে সুপারি ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাতেও কিছু পরিমাণ সুপারীর চাষ হয়ে থাকে।

পানের সাথে সুপারী খাওয়া ছাড়াও আহারের পরে অনেকেই মুখের স্বাধ ফিরে পাবার জন্য শুধু সুপারি খেয়ে থাকেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে প্রীতিভোজ শেষে পান সুপারী দিয়ে আপ্যায়ন এর একটা রেওয়াজ আছে এবং বাড়িতে মেহমান এলেও পান, সুপারি দিয়ে আপ্যায়িত করা একটি সামাজিক শিষ্টাচার বলে অবিহিত। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রধানত পানের সাথেই সুপারী ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বয়স্ক সুপারী গাছ বেড়া, চালা এবং খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সুপারী পাতাও বেড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সুপারী গাছ বাড়ির শোভাবর্ধন ও বায়ু প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে।

উৎপত্তি ও বিস্তার:
পাক-ভারত উপ-মহাদেশকেই সুপারীর উৎপত্তিস্থল বলা হলেও বাণিজ্যিকভাবে প্রধানত বাংলাদেশ ও ভারতেই সুপারীর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে উৎপাদিত সুপারীর ৯০% দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহে জন্মে থাকে। সুপারী উৎপাদনের অন্যতম জেলাগুলো হলো বরিশাল, খুলনা এবং নোয়াখালী।

সুপারী চাষের বর্তমান অবস্থা:
আমাদের দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ সুপারী চাষ হয়, তা থেকে দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে কিছু পরিমাণ সুপারী মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। বাংলাদেশে সুপারী চাষের মোট জমি ৩৬,১৯২ হে. এবং মোট উৎপাদন ২৬,৩৩০ মে. টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৭২৭ কেজি, যা তুলনামূলকভাবে কম। উন্নত পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনায় আধুনিক জাতের সুপারী চাষ করলে ফলন দ্বিগুণ করা সম্ভব।

সুপারীর উন্নতজাত:
আমাদের দেশে উচ্চ ফলনশীল সুপারী জাতের অপ্রতুলতার কারণে চাষিরা স্থানীয় জাতের সুপারী চাষ করে থাকেন। এগুলো আকারে ছোট এবং ফলন কম। কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত দু’টি উচ্চ ফলনশীল সুপারীর জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা বারি সুপারী-১ এবং বারি সুপারী-২ হিসেবে পরিচিত।

উপযুক্ত মাটি:
সুপারী চাষের জন্য উর্বর ও মাঝারী ধরনের মাটি অর্থাৎ হালকা বুনটের মাটি উত্তম, তবে বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ মান ৫.৫-৬.০ এর মধ্যে হলে সবচেয়ে ভালো হয়।

চারা উৎপাদন পদ্ধতি:
বীজ দ্বারা সুপারী গাছের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। প্রথমে বীজতলায় বীজ লাগিয়ে চারা উৎপাদন করা হয়। সুপারীর চারা বীজতলায় এক থেকে দুই বছর রাখার পর নির্দিষ্ট স্থানে লাগাতে হয়। চারা উৎপাদনের জন্য যে সব বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া দরকার তাহলো:

ক) বীজতলার জন্য মাটি নির্বাচন: দো-আঁশ, পলি দো-আঁশ মাটি বীজতলার জন্য উপযুক্ত। খোলামেলা, সেচের সুবিধা আছে এমন হালকা বুনটের মাটিতে বীজতলা করা উচিত। বীজতলার মাটিতে বালুর পরিমাণ কম থাকলে কিছু ভিটি বালু মিশিয়ে নিলে ভালো হয়। সুপারীর বীজতলা আংশিক ছায়াযুক্ত হলে উত্তম।

খ) জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ: বীজতলার জমি ৪-৫ বার ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। জমিতে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। বীজতলার জমির উর্বরতা অনুযায়ী হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন গোবর বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে, তবে কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগের দরকার নেই।

গ) বীজতলা তৈরি: প্রতিটি বীজতলা ১-১.৫ মিটার চওড়া এবং ৩ মিটার লম্বা হওয়া উচিত। বীজতলা উত্তর দক্ষিণে লম্বা হলে ভালো হয়। দুই বেডের মাঝখানে চলাফেলার জন্য দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর ৫০-৭৫ সেমি. বা ২০-৩০ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়। এরূপ ফাঁকা স্থানের মাটি তুলে নালা তৈরি করতে হবে এবং নালার মাটি বীজতলায় তুলে দিয়ে বীজতলাকে বেড আকারে ৬-৮ সেমি. উঁচু করতে হবে। নালাগুলোর মধ্যে দিয়ে সেচ ও নিকাশের সুবিধা পাওয়া যায় এবং চারার পরিচর্যা করা সহজ হয়।

ঘ) বীজ রোপণ: বীজ সংগ্রহ করার পর দেরী না করে বীজতলায় বীজ রোপণ করতে হবে। বীজ রোপণের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি. বা ১২ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ২৫ সেমি. বা ১০ ইঞ্চি। বীজ ১ থেকে ২ সেমি. গভীরে এমনভাবে রোপণ করতে হবে যাতে বীজটি মাটির সামান্য নিচে থাকে এবং বীজের উপরে মাটির একটা পাতলা আবরণ থাকে।

ঙ) রোপণ পরবর্তী যত্ন: বীজতলায় বীজ রোপণের পরপরই উপরে ছায়া দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বীজতলা খুড়কুটো বা কচুরীপানা দিয়ে ঢেকে রেখে অর্থাৎ মালচিং করে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখা দরকার। বীজতলা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে এবং অবশ্যই বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে গরু ছাগল চারা নষ্ট করতে না পারে।

চ) ভালো চারা বাছাই: বীজ লাগানোর পর তিন মাসের মধ্যে যে সকল বীজ গজায় সেগুলো থেকে ভালো চারা পাওয়া যায়। বীজ রোপণের পর সে সকল চারা তাড়াতাড়ি গজায়, দ্রুত বাড়ে, গোড়া মোটা হয়, পাতা ও শিকড় বেশি হয় এসব চারা বাছাই করা উত্তম। চারার বয়স ৬ মাস হলেই বাগানের লাগানো যায়। তবে ১২-১৮ মাস বয়সের চারা, যেগুলো খাটো ও মোটা এবং কমপক্ষে ৫-৬টি পাতা থাকে এমন ধরনের চারা মাঠে লাগানোর জন্য বাছাই করা দরকার।

জমি নির্বাচন:
সাধারণত আমাদের দেশে বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুরের পাড়ে, রাস্তার ধারে স্কুল-কলেজের আঙ্গিনায় সুপারী গাছ লাগানো হয়। তবে সুপারীর বাগান করতে হলে বাগানের জমি সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। সুনিষ্কাশিত, উর্বর, কিছুটা ছায়াযুক্ত, তীব্র বাতাস প্রতিরোধী এবং উঁচু জায়গায় বাগানের জন্যে নির্বাচন করা উচিত। জমিতে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।

জমি তৈরি এবং চারা রোপণ:
ছোট অবস্থায় সুপারী গাছ তীব্র বাতাস এবং প্রখর সূর্যালোক সহ্য করতে পারে না। কাজেই সুপারীর চারা মাঠে লাগানোর পূর্বেই ছায়া প্রদানকারী গাছ রোপণ করতে হবে। সুপারীর চারা সাধারণত মাদা তৈরি করে লাগানো হয়। মাদার আকার ৭০ সেমি. x ৭০ সেমি. x ৭০ সেমি. হলে ভালো হয়। মাদা তৈরি করার সময় উপরের মাটি একদিকে এবং নিচের মাটি অন্যদিকে আলাদা করে রাখতে হবে। গর্তের ভেতরটা শুকনো পাতা, খড় এসব দিয়ে ভরাট করে আগুনে পুড়িয়ে দিলে গর্তটা শোধন হয়ে যাবে। প্রতিটি গর্তের জন্যে ১০ কেজি পচা গোবর বা কম্পোস্ট এবং ১ কেজি খৈল গর্তের উপরের অর্ধেক মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তের তিন-চতুর্থাংশ ঐ মাটি দ্বারা ভরে ফেলতে হবে। সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। তবে জুন-জুলাই মাস চারা রোপণের জন্য উত্তম। মাদার দূরত্ব অর্থাৎ চারার দূরত্ব বর্গাকার পদ্ধতিতে ৪ হাত ঢ ৪ হাত এবং আয়াতাকার পদ্ধতিতে লাইন থেকে লাইন ৮ হাত এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪ হাত।

অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা: চারা রোপণের পর বিভিন্ন ধরনের অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা প্রয়োজন। যেমন…

ক) আগাছা পরিষ্কার: গাছের গোড়া সব সময়ই আগাছামুক্ত রাখা প্রয়োজন। বর্ষাকালে আগাছা বেশি হয় বিধায় ঘন ঘন আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। সার ও সেচ দেয়ার আগে অবশ্যই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

খ) মালচিং: মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য মালচিং একান্ত প্রয়োজন। মালচিং দ্রব্য হিসেবে কুচরীপানা, খড় সব ব্যবহার করা যায়। সাধারণত সার প্রয়োগের পর সেচ প্রদান করে মালচিং করতে হয়।

গ) গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া: গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। সেচ ও সার প্রয়োগ এবং বৃষ্টিপাতের ফলে গাছের গোড়ার মাটি সরে যায় এবং শিকড় বের হয়ে পড়ে। এজন্যই গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হয়। এছাড়াও গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা এড়াতে মাটি তুলে দেয়া প্রয়োজন।

ঘ) সেচ ও নিকাশ: সুপারী চাষে সেচ ও নিকাশের গুরুত্ব অপরিসীম। সুপারী কিছুটা আর্দ্র মাটিতে ভালো হয় বিধায় মাটিতে রসের অভাব হলেই সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। শুকনো মৌসুমে মাটির প্রকারভেদে ৫-১০ দিন পরপর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সুপারী যেমন আর্দ্রতা পছন্দ করে আবার জলাবদ্ধতাও এর জন্য ক্ষতিকর। তাই সেচের পাশাপাশি পানি নিকাশেরও ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঙ) সার প্রয়োগ: চারা লাগানোর পর গাছের সঠিক বাড়তি ও ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। জমির উর্বরতা ভেদে সারের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে অর্থাৎ উর্বরতা কম হলে সারের পরিমাণ বেশি এবং উর্বরতা বেশি হলে সারের পরিমাণ কম হবে।
রাসায়নিক সার ২ ভাগে ভাগ করে বছরে ২ বার গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে (প্রথমবার সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২য় বার ফেব্রুয়ারি মাসে)।

রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা:
সুপারী গাছ ও ফল বিভিন্ন প্রকার রোগ পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। ভালো ফলন পেতে হলে এ রোগবালাই ব্যবস্থাপনা একান্ত অপরিহার্য। প্রধান প্রধান রোগবালাই এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

ক) ফল পচা রোগ: রোগের আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত সুপারীর বোঁটায় পানি ভেজা ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে বড় আকার ধারণ করে। আক্রান্ত স্থান ক্রমান্বয়ে বাদামী ও ছাই রঙের হয়ে এক সময়ে পুরো সুপারীটিই রোগাক্রান্ত হয়ে পচে ঝরে পড়ে।

প্রতিকার ব্যবস্থা: এ রোগ দমনের জন্যে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের শুরুতেই সুপারীর ছড়ায় ও পাতায় ১% ‘বোর্দো মিক্সার’ অথবা ১.৫% হারে ম্যাকুপ্রাক্স নামক ছত্রানাশক রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ১৫-৩০ দিন পর পর ৩/৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত গাছের সুপারী ছড়াসহ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং গোড়ায় পানি জমে থাকলে তা নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

(খ) কুঁড়ি পচা রোগ: এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ ক্ষেত্রে ছত্রাক জীবাণু মোচার গোড়ায় কাণ্ডের সংযোগ স্থলের নরম টিস্যু আক্রমণ করে। আক্রান্ত স্থানের টিস্যু প্রথমে হলুদ ও পরবর্তীতে বাদামী রঙ ধারণ করে এবং শেষ পর্যায়ে পচে কালো হয়ে কুঁড়িগুলো ঝরে পড়ে।

প্রতিকার: রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই আক্রান্ত স্থান চেছে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পরিষ্কার করে ‘বোর্দো পেস্ট’ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থান ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গাছের পাতা ও মোছায় ১% বোর্দো মিক্সার অথবা ১.৫% কুপ্রাভিট ১৫-২০ দিন অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে। মৃত গাছ, ফলপচা রোগে আক্রান্ত মোচা ও ফল সরিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে এবং বাগানের সমস্ত গাছে ১% বোর্দো মিক্সার অথবা কুপ্রাভিট স্প্রে করে সকল গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে।

(গ) মোচা শুকিয়ে যাওয়া ও কুড়ি ঝরা: এ রোগটি প্রধানত গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে। রোগের আক্রমণে আক্রান্ত মোছার গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত হলুদ হয়ে যায়, পরবর্তীতে গাঢ় বাদামী রঙ ধারণ করে এবং পুরো মোচাটি শুকিয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত মোচার কুঁড়িগুলো ঝরে পড়ে।

প্রতিকার: আক্রান্ত গাছের মোচা কেটে পুড়ে ফেলতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই ‘ডায়থেন এম-৪৫ অথবা নোইন নামক ছত্রানাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ চা চামচ হিসেবে গাছে মোনা বের হলেই ১৫ দিন পরপর ৪-৫ বার স্প্রে করতে হবে।

মাকড়: সুপারী গাছ কয়েক ধরনের মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয় যেমন: লাল মাকড়, সাদা মাকড়, হলদে মাকড়। সকল বয়সের সুপারী গাছেই লাল ও সাদা মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে আক্রান্ত পাতা প্রথমে হলুদ ও পরে তামাটে রঙ ধারণ করে এবং পরিশেষে শুকিয়ে যায়। আস্তে আস্তে পুরো পাতাই শুকিয়ে যায়, গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।

প্রতিকার ব্যবস্থা: এ মাকড় দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে ৫ চা চামচ ‘ক্যালথেন’ নামক মাকড়নাশক পাতার নিচের দিকে ১৫-২০ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

(ঙ) মোচার লেদা পোকা: এ পোকার মথ কচি মোচায় ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে ক্রীড়া বের হয়ে অফুটন্ত মোচার ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং মোচার মধ্যে কচি-ফুলগুলো খেতে থাকে
এবং মল ত্যাগ করে সম্পূর্ণ মোছাটাকেই পূর্ণ করে ফেলে। আক্রান্ত মোচায় ফুল আসে না এবং মোচাটিও ফুটে না।

প্রতিকার: আক্রান্ত মোচা সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছসহ সকল গাছে ১০ লিটার পানির সঙ্গে ৬ চা চামচ সুমিথিয়ন মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পরপর ২-৩ বার মোচায় স্প্রে করতে হবে।

(চ) শিঁকড়ের পোকা: এ পোকার কীড়া বা বাচ্চা গাছের শিকড়ে আক্রমণ করে। এরা প্রথমে গাছের কচি ও নরম শিকড় খেতে শুরু করে। অতঃপর গাছের শক্ত ও পুরানো শিকড় খেয়ে ফেলে। ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়, উপরের কাণ্ড চিকন হয়ে আসে এবং ফলন কমে যায়।

প্রতিকার: এ পোকার আক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলেই গাছের চারপাশে ১ মিটার ব্যসার্ধে হালকা করে কুপিয়ে বাসুডিন ১০ কেজি অথবা ফুরাটার ৩জি গাছ প্রতি ১০ গ্রাম হারে ছিটিয়ে পানি সেচ দিতে হবে এবং মালচিং করে দিতে হবে। বছরে দু’বার অর্থাৎ বর্ষার আগে ও পরে এভাবে মালচিং করে দিতে হবে। তাহলে এ পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

ফসল সংগ্রহ:
সুপারীর চারা লাগানোর পর সঠিকভাবে যত্ন নিলে ৪-৫ বছরের মধ্যেই ফলন আসতে শুরু করে। গাছে ফুল আসার পর থেকে ফল পাকতে ৯-১০ মাস বয়স লাগে। ফল সংগ্রহের সময়ে সুপারি ছড়াগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে নামাতে হবে। সুপারী পরিপূর্ণভাবে পাকা, আধাপাকা, অথবা পরিপক্ব কাঁচা অবস্থায় সংগ্রহ করা যায়। উল্লেখ্য যে, সুপারী সংগ্রহ নির্ভর করে তা কিভাবে ব্যবহার করা হবে বা প্রক্রিয়াজাত করা হবে তার ওপর।

ফলন:
এলাকা ভেদে বিভিন্ন স্থানের ফলনে পার্থক্য রয়েছে। জাতের বিভিন্নতা, পরিচর্যা, গাছের বয়স, জলবায়ুর প্রভাব এসব কারণগুলো এর জন্য দায়ী। সাধারণত সুপারী গাছ ১০-৪০ বছর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ফলন দিয়ে থাকে। একটি গাছে বছরে ৩-৫টি ছড়া আসে এবং প্রতি ছড়াতে ৫০-১৫০টি পর্যন্ত ফল থাকে। এতে হেক্টর প্রতি ১-৭ মে. টন পর্যন্ত শুকনো সুপারী পাওয়া যায়। ‘বারি সুপারী-১ এবং বারি সুপারী-২ এর ফলন যথাক্রমে ৫.৬৫ টন/হে. এবং ৭.২৫ টন/হে.।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: