ইমোজির আবিষ্কারক শিগেটাকা কুরিতা

ডেস্ক নিউজ:
কোনো শব্দ খরচ না করেও শুধু ইমোজি ব্যবহার করে মানুষের হাসি, কান্না, ভালোলাগা-ভালোবাসাসহ সব অনুভূতি খুব সহজেই প্রকাশ করা যায়। শুধু অনুভূতিই না, পছন্দসই খাবার, আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ আরো অনেক কিছুই প্রকাশ করা যাচ্ছে শুধু ইমোজি দিয়ে।

স্মার্টফোনের এ যুগে ইমোজিগুলো ভিজ্যুয়াল ভাষায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছি, কে আমাদের অনলাইনের ভাষাকে এত সহজ করে দিয়েছেন?

ইমোজির আবিষ্কারক জাপানের নাগরিক শিগেটাকা কুরিতা। নিজের আবিষ্কার নিয়ে এখনও বিষ্মিত তিনি। অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে তার আবিষ্কৃত ইমোজিগুলো দেখে তিনি যথেষ্ট আনন্দ পান বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে উল্লেখ করেন, আমার আবিষ্কারের এত সাফল্য দেখে বিষ্মিত হয়েছি, তবে আমি এমন একটি কাজই করতে চেয়েছি, যেটির খুব দরকার ছিল।

তিনি বলেন, আমিই একমাত্র ব্যক্তি নই, যিনি মেসেজিংয়ের সময় কিছু একটা কিছু একটার অভাব বোধ করতাম, বরং প্রায় সবাই এ অভাবটা বোধ করতেন।

বর্তমানে প্রায় ১৮শ’ ইমোজির ব্যাবহার আছে ইন্টারনেটে এবং এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ইমোজির প্রভাব এতটাই যে, ‘নিউ ইয়র্ক মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট’ পর্যন্ত এর স্বীকৃতি দিয়েছে, যেখানে পাবলো পিকাসোর ছবি প্রর্শন করা হয়। এখন জাদুঘরটিতে ১৭৬টি ইমোজির মূল নকশাও প্রদর্শন করা হয়।

১৯৯৯ সালে এনটিটি ডকোমোতে কাজ করার সময় প্রথম ইমোজির নকশা করেন কুরিতা। ফেসবুকে হলুদ চেহারার ও আকর্ণ বিস্তৃত হাসির যে ইমোজি দেখতে পই, প্রায় এরকম একটিই ছিল কুরিতার প্রথম নকশা।

কীভাবে ইমোজি ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতো তথ্য দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবা শুরু করলেন তিনি। সূর্য ও ছাতার ইমোজিগুলো এসেছে সে ধারণা থেকেই। এসব ইমোজিগুলোও তার শুরুর দিকের কাজ। জাপানের জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজ ‘মাঙ্গা’ ও চীনের ‘কাঞ্জি’ নামের এক ধরনের অক্ষর থেকে এসব ইমোজির অনুপ্রেরণা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

লিখিত ভাষা অনেক সময় ভুল অর্থ দিতে পারে। কিন্তু ইমোজি দিয়ে সেসব ভুল কাটিয়ে উঠতে চেয়েছেন কুরিতা। লেখার সঙ্গে একটি ইমোজি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘একটা ‘হার্ট’ চিহ্ন থাকলে সে মেসেজটিকে আর খারাপভাবে দেখার কোনো উপায় নেই, মেসেজে যা-ই লিখা থাকুক।’

এ মাসে কুরিতার এমন অনন্য আবিষ্কারের সম্মানে নিউ ইয়র্কে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। নকশা সংগ্রাহক এবং এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পল গ্যালওয়ে নিজের ওয়েবসাইটে লিখেছেন, ‘১২x১২ পিক্সেকেলের এ ইমোজিগুলো অনলাইনে নতুন এক ধরনের ভাষার বিপ্লব ঘটিয়েছে।’

তার আবিষ্কৃত অনেক ইমোজি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত ইমোজির স্বীকৃতি পেয়েছে। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি পড়ার ইমোজিটি এগুলোর অন্যতম।

অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারে কোনো অনুভূতি বা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ইমোজির জুড়ি নেই। টেনিস তারকা রজার ফেদেরার যেমন ইমোজি ব্যবহার করে তার প্রত্যাবর্তনের কথা জানান। আবার অষ্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন শুধু একটি ইমোজি দিয়ে।

২০১৫ সালের ইমোজি রিপোর্ট অনুসারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯২ শতাংশ মানুষ ইমোজি ব্যাবহার করেন। ২০১৫ সালেই অক্সফোর্ড ডিকশনারি তাদের অভিধানে ‘ইমোজি’ শব্দটি যোগ করে।

এ মাসে লন্ডনের একটি অনুবাদ সংস্থা জানিয়েছে, তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা ইমোজি উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এটিকে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল’ ভাষা হিসেবেও উল্লেখ করেছে তারা।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: