ধর্মনিরপেক্ষতার পথ ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

কৃষিবিজ্ঞানী ড. নাজমুল হক:
ধর্মকে ভর করে কোন জাতি বেশি দূর এগুতে পারে না। হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দী বলতেন ধর্ম কখনোই একটি জাতির ভিত্তি হতে পারে না। তার ভবিষ্যত বাণী সমস্ত পৃথিবী জুড়েই প্রমাণিত হয়, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যে এত মুসলিম দেশ থাকা সত্ত্বেও শুধু ধর্মের ভিত্তিতে কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তেমনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ধর্ম কোন ক্রমেই মূল যোগসূত্র হতে পারে না।

ষাটের দশকের প্রথম দিকে তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দী পাকিস্তানের গণতন্ত্র রক্ষায় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এন.ডি.এফ) গঠন করেন। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু করার পরপরই গেপ্তার হন ও কারা বরণ করেন, ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণ করা হলেও অবশেষে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণ অপ্রকাশিত থেকে যায়। হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দীর ডান হাত ও আওয়ামী লীগের উঠতি নেতা ছিলেন শেখ মুজিব। তার ভাষ্য মতে সোহারাওয়ার্দীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বাহিনীর প্রধানকে অনুরোধ করেছিলেন পাকিস্তানের গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে দেশটিকে ধ্বংসের মুখে যেন ঠেলে দেয়া না হয়। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান ভূতাত্বিক ভাবেও ছিল একে অপর থেকে দেড় হাজার কি.মি. দূর। সংস্কৃতি, পোশাক, আশাক ও খাদ্যাভাসের দিক থেকে, এমনকি ভাষাগত ভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।

হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দী যখন জেনারেল আইয়ুব খানের পোষা পাক বাহিনীর হাতে মৃত্যুবরণ করেন তখন দুই পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক মারাত্বক অবণতি হয় ও রাজনৈতিক বিভেদ ঘটে। ফল স্বরূপ দুই পাকিস্তানে ভিন্ন ধারার রাজনীতির সূচনা ঘটে। ১৯৬৫ সনে ইন্দোপাক যুদ্ধের পর পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চে আর্বিভাব ঘটে দুই নেতার, পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিব এবং পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভূট্টো। একদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ এক ইউনিট ব্যবহার বিলুপ্তি চাচ্ছিল, অপরদিকে পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেয়া ৬ দফা দাবি পূরণের তাগাদা। অর্থাৎ আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন।

হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দীর মৃত্যুর চার বছর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেয়া ৬ দফা হয়ে উঠে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রাণের দাবি ও আন্দোলনের মূল চালনা শক্তি। ৬ দফা আন্দোলনের পাঁচ বছরের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধের দামামা বেজে উঠে। দশ মাসের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। পাকিস্তান ধর্মের উপর ভিত্তি করে আর একতা রক্ষা করতে পারেনি।
পাকিস্তান হয়ে উঠে এক সত্য উদাহারণ যে ধর্মের উপর ভর করে আধুনিক যুগে কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আধুনিক জাতি সত্তার উদ্ভবই ঘটেছিল গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শকে লালন করে। এমনকি তত্ত্ব ও ইজম মানুষকে জাতি সত্ত্বা বা একটি রাষ্ট্রে একত্রিভূত করতে পারেনা। শুধু আধুনিক যুগে নয়, প্রাচীন কালেও একক ধর্মেও মানুষের মধ্যে পরিচয় সংকট অহরহই ছিল। ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে আব্বাসীয় ও উমায়য়াদের মাঝে নজিরবিহীন গৃহযুদ্ধ হয়েছিল।

আধুনিক যুগে ভারতে হিন্দু মুসলিম তার চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি প্রাণ হারিয়েছে। অবাঙালি মুসলিম শাসকদের দ্বারা নিরীহ বাঙালি অনেক বঞ্চনার শিকার হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছয় বৎসরকাল স্থায়ী হয়েছিল। কিন্তু ইরাক ও ইরান দুটি মুসলিম দেশের মাঝে যুদ্ধ চলে আট বৎসর। রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করে প্রাণ কেড়ে নেয়া হয় অর্ধলক্ষেরও বেশি মানুষের। সৌদি আরব নিজেদেরকে ইসলাম ধর্মের ও মুসলমানদের রক্ষাকর্তা বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু তারাই আমেরিকাকে ইরানে বোমা নিক্ষেপের প্ররোচনা দিয়ে এসেছে। কিন্তু আরব জাতি কখনোই আমেরিকাকে বাধা প্রদান বরেনি এই বলে যে, প্যালেস্টাইনকে রক্ষা করা অথবা আরব মুসলিমদের উপর অত্যাচার বন্ধ করা বা ইসরাইলবাসীকে ধ্বংসত্বাক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখুন।

শুধু ধর্মই একা নয়, সমাজতন্ত্রের মত জনপ্রিয় চিন্তাধারা গত শতকে মানুষকে স্বার্থকভাবে একত্র করতে পারেনি বা সমাজতান্ত্রিক রাষ্টের সফল প্রতিষ্ঠা দিতে পারেনি।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ৬০’র দশকের শেষ প্রান্তে উপলব্ধি করে যে পাকিস্তানের সাথে সম-অধিকার, সমান বা আত্বমর্যাদার স্বার্থে একত্রে আর চলা যায় না। মধ্যপ্রাচ্যে অনেক মুসলিম রাষ্ট্র আছে যারা ভিন্ন ভাবে স্বাধীন জাতিসত্তা নিয়ে মাথা উচুঁ করেছে। ভারত উপমহাদেশে মুসলমানরা ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির হয়ে একটি মাত্র জাতি হিসেবে গণ্য হতে পারে না। বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যূষিত দেশ হলেও অনান্য ধর্মাবলম্বি যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ ও উপজাতিরাও বসবাস করছে। তাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জীবন যাপন ধারা।

প্রাচীনকাল থেকেই তারা বসবাস করে আসছে। একমাত্র গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাই পারে তাদেরকে একটি জাতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে ও একটি বসবাস করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে। বঙ্গবন্ধু সে কারণেই ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ কথা বলতেন যার শক্তিতে ব-দ্বীপ অঞ্চল একত্র হতে পেরেছিল। হাজার বছরের পুরানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক মানুষগুলো বাঙালি জাতি হিসেবে এককভাবে দাঁড়াতে পারে, যেমন একত্রিত হয়েছে ইউরোপিয়ান দেশগুলো “ই ইউ” হিসেবে। বাংলাদেশ যদি ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে চায় তবে বাংলাদেশের ভাগ্যটাও অনেকটা পাকিস্তানের মত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনার ফলে পাকিস্তানে আজ ধর্মের বিভাজন তো হয়েছেই, জন্ম দিয়েছে ‘টেরোরিজম’ নামক শংকার, এমনকি তাদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ২৫ বছরের বেশি একত্রে না থাকার দুটি প্রধান ইতিহাসবিদরা সনাক্ত করেছেন, প্রথমত ধর্মভিত্তিক জাতি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, দ্বিতীয়ত গণতন্ত্রকে নির্মূল করে মসজিদ ভিত্তিক শাসন ও সামরিক শাসন জারি করা। জিন্নাহ দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হয়ে দ্বিজাতি তত্তে্বর কথা কখনোই উল্লেখ করতেন না। যদিও তিনি শুধুমাত্র ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে অতটা আগ্রহী ছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন মুসলমান প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ। জিন্নাহ সাহেব পাকিস্তান প্রতিষ্টা লাভের পর তার ঘোষিত ধর্মভিত্তিক দ্বিজাতি তত্ত্বকে অনেকটা কবরেই পাঠিয়ে দেন এবং পাকিস্তানের জনগণ হিন্দু মসলিম হিসেবে নয় পাকিস্তানি হিসেবে পরিচিত হবে, অর্থাৎ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা করেছিলেন।

পাকিস্তান যখন প্রথম সংসদ অধিবেশনে বসে তখন সংসদ সদস্যরা ‘বিসমিল্লাহ’ উচ্চারণ করেননি এবং মি. জিন্নাহ স্বয়ং ‘আল্লাহর নামে’ অধিবেশন শুরু না করে ‘খোদার’ নামে শুরু করেন। লিয়াকত আলী খানের তত্ত্বাবধানে পাকিস্তানের প্রথম কেবিনেট গঠন হয়েছিল। সদস্যদের কেউই তাদের বক্তব্যের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ উচ্চারণ করেননি। জিন্নাহ তার মৃত্যুর পূর্বেই অনুভব করে ছিলেন যে ধর্মের উপর উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র গঠন করা যে কতটা অবাস্তব চিন্তাধারা ছিল। জিন্নাহ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম লীগের নেতৃত্ব পর্যায়ে ব্যক্তিদের এক সভায় ডেকে বলেছিলেন যে ‘মুসলিম লীগের উচিত হবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায় হতে সদস্য সংগ্রহ করা এবং পার্টির নাম বদলে যেন “জাতীয় লীগ/ন্যাশনাল লীগ” রাখা হয়।

জিন্নাহ এমনও চেয়েছিলেন যে পাকিস্তানের পরিচিতি যেন সাধারণ রাষ্ট্র হিসেবেই হয়, ইসলামিক রাষ্ট্র হিসাবে নয়। জিন্নাহ সাহেবের মৃত্যুর পর তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান প্রথম সংবিধান রচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। উক্ত সংবিধানে আবশ্যিক বা প্রথমেই ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করেননি, শুধু তাই নয়, শব্দ চয়নে ‘আল্লাহর’ স্থলে ‘খোদা লেখা হয়েছিল।

পাকিস্তানের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীটি আসে মাওলানা আকরাম খানের কাছ থেকে, তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সংসদ সদস্য। তিনি সংবিধানে পুনরায় ‘আল্লাহ’ শব্দটি ‘খোদা’ লেখা হয়েছিল। পাকিস্তানের সংবিধানে পুনরায় ‘আল্লাহ’ শব্দটি ‘খোদা’ শব্দের পরিবর্তে ব্যবহারের সুপারিশ করেন এবং তা তৎকালীন ক্ষমতাশীনরা আবার মেনেও নেন। কালের পরিক্রমায় লিয়াকত আলী খান ১৯৫৬সনে আততায়ীর হাতে নিহত হন। ১৯৫৬ সনে তৈরি হয় নতুন সংবিধান যার বদৌলতে পাকিস্তান পুনরায় ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তানের পুনরায় নাম বদলের কারণে প্রতিবাদের ঝড় তুলে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ, তা সত্ত্বেও এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়। ১৯৫৮ সালে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়ে সামরিক শাসনের পুনঃ আর্বিভাব ঘটে, প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬২ সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচিতি ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে রাখেন, কিন্তু ‘বিসমিল্লাহ’ আর সংযোজন করেননি বা কোন রাষ্ট্র ধর্ম জারি করেননি। ফলে পাকিস্তান ক্রমশই একটি মৌলবাদি রাষ্ট্রে পরিণত হতে শুরু করে, তার স্বর্ণযুগ ছিল জেনারেল জিয়া-উল হক এর সময়েই। রাজনৈতিক দলের শাসনকালে পাকিস্তান গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিতি পেতে চেষ্টা করেছে, ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে প্রাধান্য পেতে চেয়েছে খুবই কম।

বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পর, পাকিস্তানের পথ অনুসরণ করেনি। বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা করে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার” । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই পাকিস্তানের জেনারেলদের পথ অনুসরণ করেননি। তাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট পাকিস্তানি জেনারেলদের দোসরদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল একটি নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের সরকার ক্ষমতাচ্যুত করে, ক্ষমতা লোভী স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি পাকিস্তানি জেনারেলদের পদাংক অনুসরণ করে শুরু করে মিলিটারি শাসন।

বাংলাদেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা পরিবর্তনের শিকার হয়। তারপরেও আমাদের বোধোদয় হয়নি পাকিস্তানের অবস্থা অবলোকন করার পর, তাদের অবাস্তব চিন্তা ভাবনার কারণে ধর্মভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠা পরিকল্পনা জন্ম দেয় সার্বিক বিপর্যয়ের, পাকিস্তানের অবস্থা অবলোকন করার পর, তাদের অবাস্তব চিন্তা ভাবনার কারণে ধর্মভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠা পরিকল্পনা জন্ম দেয় সার্বিক বিপর্যয়ের, পাকিস্তান রাষ্ট্র জুড়ে বেড়ে উঠেছে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ধর্মনিরপেক্ষতা লক্ষ্য করা গেলেও, পাকিস্তান ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে আফগান তালেবানদের বধ্য ভূমিতে যেখানে প্রায়ই চলে ন্যাটো বাহিনীর হামলা। এক মুসলমান আরেক মুসলমানের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছ্ মুসলিম সৈনিকের বোমার আঘাতে কত না মসজিদ ধ্বংস স্তপে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে পাকিস্তানের অস্তিত্বই এখন হুমকীর সম্মুখীন।

পাকিস্তান বর্তমানে অনেকটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত, অপরদিকে বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্ন্তভূক্ত যে কোন অবস্থার বিবেচনাতেই মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ায় সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া ধর্ম নিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে লালন করে জাতীয় ঐক্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করেছে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জাতি ও ধর্মাবলম্বীদের মাঝে শান্তির পথ দেখিয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র। দুটি দেশের রাষ্ট্র প্রধান বৃহত্তর স্বার্থে সস্তা জনপ্রিয়তার আশা না করে কঠোর হস্তে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে দমন করার মাধ্যমে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে পেরেছে।

১৯৭৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সমৃদ্ধির পথে এগিয়েছিল, তার যাত্রা রোধ করে দেয় পাকিস্তানি মনমানসিকতার জেনারেলদের অপপ্রচেষ্টায় বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের পথ ও ধারাকে বদলে দেয়, শুরু করে পাকিস্তানি মিলিটারি শাসনের পদাংক অনুসরণ ফল স্বরূপ, এদেশ সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থেকে অনেক অনুন্নত থেকে যায়। তথাকথিত বাংলাদেশী জেনারেলরা আর ক্ষমতায় আসীন নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফলে গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ভাষাসৈনিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর অনেক লেখাতেই বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে গুরত্বপূর্ন তথ্য প্রদান করেছেন, যার অনেক তথ্য এ লেখায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের দীর্ঘ যাত্রাপথ কন্টক মুক্ত করতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের সহায়ক ৭২’র সংবিধান পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য সুপ্রিম কোর্ট সহায়ক ভ‚মিকা পালন করেছে। বর্তমান সরকারকে বাংলাদেশকে সঠিক পথে নিয়ে আসার এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র মনার আদর্শ পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশ যে সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিল তা বাস্তবায়ন করতে পারলেই এদেশ শঙ্কামুক্ত ও শান্তির পথে চলবে ও উত্তোরোত্তর উন্নয়নের শিখরে পৌঁছাতে পারবে।

মুক্তিকামী জনতার আত্মবিসর্জনে পাওয়া এই দেশ, গত ৪ দশক যে পাকিস্তানি দোসরদের কালো থাবার নিচে ছিল, তা পুনরায় আঁচড় কাটবে এই সবুজ বাংলার জমিনে, যদি না মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রাখা হয়। এখনই সময় বাংলাদেশের জনগণের একত্রিত হবার, সোচ্চার হবার তাদের বিরুদ্ধে, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, স্বাধীনতার মর্যাদাকে খাটো করছে, বাধাগ্রস্ত করছে গণতন্ত্রের পথচলাকে এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবার পবিত্র প্রয়াসকে। আমাদের আজ একমাত্র স্বপ্নই হল সংবিধানের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠা করা। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে জাতির জনকের “সোনার বাংলাদেশ”। সেই পথকে সহজ ও স্বার্থকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানন্ত্রী দেশরত্নন শেখ হাসিনা ও আপামর বাংলাদেশের মানুষের ভিশন ২০২১ সফল হলেই বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন পূর্ণতা পাবে।

__________________________________

লেখক: শিক্ষক ও কৃষিবিজ্ঞানী।

ই-মেইল: snhoque28@yahoo.com

.

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। সবুজবাংলাদেশ24.কম লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে সবুজবাংলাদেশ24.কম-এর সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে।]

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: