কচ্ছপের সাহায্যে আসছে সুন্দরবনের ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা (Batagur Baska)’ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে সুন্দরবনের করমজলে। বন বিভাগের বরাদ্দকৃত ৫০ মি. প্রস্থ ও ১০০ মি. দৈর্ঘ্যের ওপর স্থাপিত বিলুপ্ত প্রজাতির এ কচ্ছপকে রক্ষায় এবং এর প্রজনন, সংরক্ষণ ও সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ বন বিভাগ, জু ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া) টি.এস.এ (আমেরিকা) এবং আই. ইউ. সি. এন (বাংলাদেশ) যৌথ উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো এর গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এরইমধ্যে গবেষণা সফল করতে দুটি বিলুপ্ত প্রজাতির (বাটাগুর বাসকা) কচ্ছপের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার, ক্যামেরা বসিয়ে সুন্দরবনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ।

বর্তমানে যন্ত্রটি কচ্ছপের জীবনাচরণের তথ্য ও পরিবেশগত ছবি গবেষকদের কাছে সফলভাবে প্রেরণ করছে। করমজলে ওই কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. আ. রব শুক্রবার বিকেল ৩টায় মোবাইল ফোনে পরিবর্তন ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রব বলেন গত ১২ ফেব্রুয়ারি বড় দুটি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপের পিঠে স্যাটালাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে ভাটার সময় সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর মোহনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই স্যাটালাইট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে গবেষকরা বিপন্ন ওই কচ্ছপের জীবনাচরণের তথ্য ও ছবি স্পষ্ট পাচ্ছেন।

রব আরো বলেন, বাটাগুর বাসকা বা বড় কঠালি নামের এই কচ্ছপগুলোর সারবিশ্বে রয়েছে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। খাদ্য হিসাবেও এর রয়েছে পুষ্টিগুণ। খাদ্যাভাব, জেলেদের জালে আটক, খাল ও বিলের পনি দূষণ, নির্বিঘ্নে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি কারণে এ প্রজাতির কচ্ছপ আজ বিলুপ্তপ্রায়। প্রাপ্ত বয়সে এরা ২৫-৩০ কেজি ওজনের এই কচ্ছপ ৭০-৮০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বাংলাদেশের বন বিভাগ, আমেরিকার টারটেল সারভাইভাল এলায়েন্স, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা জু ও প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির ও হরিণের পাশাপাশি ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয় বাটাগুর বাসকা’র কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র।

তৌহিদুর জানান, বিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় থাকা বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ করমজলে প্রজননের আগে বিশ্বের মধ্যে শুধু সুন্দরবনসহ বাংলাদেশ ও ভারতে ছিল মাত্র ১শটির মতো। মাত্র ৩ বছরে সুন্দরবনের করমজলে প্রজননের মাধ্যমে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৭টিতে। বর্তমানে করমজল কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে ১শ ১৭টি কিশোর-কিশোরী ও ১০টি বড় বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বড় পুরুষ ও ৪টি নারী কচ্ছপ রয়েছে। বড় অন্য দুটির পিঠে স্যাটালাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরের মোহনার আদাচাই এলাকার সাগরের পানিতে। এছাড়া ৮টি কচ্ছপ চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডিম দেবে। ওই ডিম থেকে ফুটে বের হওয়া বাচ্চাগুলো প্রাপ্তবয়স্ক হলে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হবে।

বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ঢাকা অঞ্চলের বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির বলেন, ‘বিশ্বের সংকটাপন্ন এই প্রজাতির কচ্ছপ আমাদের রক্ষা করতে হবে। সে জন্যই এ উদ্যোগ।’

স্যাটেলাই ট্রান্সমিটার সিস্টেম সম্পর্কে জাহিদুল কবির জানান ‘মূলত এ প্রাণীর স্বভাব, খাদ্য সংগ্রহ, বিচরণ, পরিবেশসহ বঙ্গোপসাগরের গভীর না অগভীর পানিতে থাকতে পছন্দ করে সে বিষয়ে জানার জন্য দুটি কচ্ছপের পিঠে স্যাটেলাই ট্রান্সমিটার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এখন সুদূর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বসে এই কচ্ছপের জীবনাচরণের তথ্য ও ছবি স্পষ্ট দেখা এবং মনিটর করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: