এক প্রতিভাবান স্বপ্নবাজ তরুণের গল্প
মো. আব্দুর রহমান:
পুরো নাম তন্ময় কুমার ঘোষ। সবার কাছে তন্ময় নামেই বেশি পরিচিত। তন্ময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একজন গ্রাজ্যুয়েট। এক প্রতিভাবান স্বপ্নবাজ তরুণ। নিয়ম-নীতির একাডেমিক পড়ালেখার গন্ডির বাইরেও রয়েছে তার সমান পথচলা।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় রয়েছে তার অংশগ্রহণ ও সাফল্যর ইতিহাস। তিনি সিনজেনটা-ইউএসএআইডি কানেশন প্রোগ্রাম-২০১৭ তে বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত তিনজন ছাত্রের মাঝে একজন। এই কানেকশন প্রোগ্রামটি ২৫ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত হয়।
তন্ময়ের সাফল্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল “ফিউচার এগ্রি এন্ট্রাপ্রেনার কনটেস্ট” ২০১৫-তে সারা দেশের মাঝে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে। এরপর ২০১৬ সালে সে বেটার স্টোরিস লিমিটেডের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইনোভেশন ফান্ড পেয়ে ‘ইকোফুয়েল‘ নামক প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরী করে পরিবেশ দূষণরোধ করা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।
গেল ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত “টেক ফর ফারমার্স এশিয়া চ্যালেঞ্জ ২.0” নামক একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন তন্ময় । সেখানে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে “ইমার্জিং ইয়াং এগ্রিকালচারাল লিডার” নামক প্যানেলে একজন প্যানেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
“টেক ফর ফারমার্স এশিয়া চ্যালেঞ্জ” এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় কৃষিভিত্তিক প্রতিযোগিতা যা ইউএসএআইডি, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাসেটসার্ট ইউনিভার্সিটি এবং সিনজেনটা এগ্রি বিজনেস এর সহায়তায় দুই বছর যাবৎ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে ১লা আগস্ট ২০১৭ তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে ‘পদচিহ্ন’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সার্বিক সহায়তায় “বি এন এগ্রিকালচারাল লিডার” শীর্ষক একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করেন। শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষকবৃন্দ ও গবেষকরা এই ওয়ার্কশপে উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী, ইউএসএআইডির ফিড দ্যা ফিউচার এশিয়া প্রকল্পের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. মাকসুদুর রহমান, সিনজেনটা বাংলাদেশের কর্পোরেট এফেয়ার্সের লিড এ.বি.এম জিয়াউর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে তিনি জাত্রোফা ও করচের তেল থেকে বায়োডিজেল প্রস্তুত করছেন এই তরুণ প্রতিভাবান। এদিকে, শৈবাল থেকে জ্বালানি উৎপাদনের জন্যও তিনি চেষ্টা করছেন।
বিকল্প জ্বালানির বিষয়ে তন্ময় বলেন, গ্রিন হাউস ইফেক্ট আর জলবায়ু পরিবর্তন সমগ্র পৃথিবীর অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়। গ্রিন হাউস ইফেক্ট আর জলবায়ু পরিবর্তন সঠিকভাবে মোকাবিলা না করতে পারলে ২০৫০ সালের দিকে বাংলাদেশের ২৫% জমি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি ২০৫০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ প্রায় শেষের দিকে থাকবে। এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানির দিকে নজর দেওয়া উচিৎ। প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট আমদানি করে। সেক্ষত্রে আমরা দেশের অভ্যন্তরে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন করতে পারলে হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও রোধ করতে সক্ষম হবো।
তিনি আরোও বলেন, বাংলাদেশে বায়োডিজেল এবং বায়োইথানল অনেক বড় পরিসরে উৎপাদন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আর গবেষণা প্রয়োজন।
২০১৬ সালে তন্ময় বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশীপ সেন্টার আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইয়ুথ লিডারশীপ সামিট ২০১৬ তে অংশগ্রহণ করে এবং সেখানে একজন গ্রাজ্যুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পরে বাংলাদেশের সেরা মেধাবীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ পুরস্কার ২০১৬ এর একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ফলস্বরূপ সে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের (ডিএফআইডি) অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার এর সহযোগিতায় ‘একুয়ালাইন‘ নামক প্রকল্প সঞ্চালনা করছে।
তার প্রকল্প ‘একুয়ালাইন‘ এর মুল উদ্দেশ্য হছে মৎস্যজাত বর্জ্য হতে মূল্যবান প্রডাক্ট তৈরী করে তা বাজারে বিক্রি করা এবং লাভের অংশ মাছ বিক্রেতার মাঝে বণ্টন করে তাদের মাসিক আয় বৃদ্ধি করা। এর ফলে মৎস্যজাত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিরস্থায়ী সমাধান হবে এবং তার প্রভাব বাংলাদেশের জিডিপিতেও পঢ়বে যদি এই প্রকল্পটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়। কেননা দেশে মাছের খাবার তৈরী করার ৫০-৫৫% উপাদান এখনো আমদানি করা হয়। তিনি মৎস্যজাত বর্জ্য থেকে উন্নতমানের মাছের খাবার তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন।
এসবে পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সংগঠন পদচিহ্নে রয়েছে তার পদচারণা। “ব্যাং-স্পার্কিং ড্যান্সার অফ বিএইউ” নামক স্ট্রিট ড্যান্স টিম তার এবং তার বন্ধু বিরাজ-শিশিরের মাধ্যমে অগ্রযাত্রা শুরু করে। ব্যাডমিন্টন খেলাতেও বেশ পারদর্শী তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোন ক্যারিয়ার ক্লাব নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি এবং অতিদ্রুত একটি ক্যারিয়ার ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। কারণ তিনি মনে করেন তরুণদের গঠনমূলক কাজে উৎসাহিত করতে, তাদের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে এবং তরুণদের দক্ষতার জায়গাগুলকে শাণিত করতে ক্যারিয়ার ক্লাবের কোন বিকল্প নেই।
জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে তন্ময় বলেন, ‘ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করার মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই’।
You must be logged in to post a comment.