২১ গুণীজনের হাতে একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২১ বিশিষ্ট নাগরিকের হাতে এ বছরের একুশে পদক তুলে দিয়েছেন। বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এই অনুষ্ঠানের অয়োজন করে।
জাতীয় ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ২০১৮ সালের একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়। পদকপ্রাপ্তদের পুরস্কার হিসেবে একটি সোনার পদক, সনদপত্র এবং ২ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম পদক বিতরণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং পদকপ্রাপ্তদের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিঢিয়ে থাকা প্রতিভাকে খুঁজে বের করে তাদের মর্যাদা দিতে হবে। তাহলেই গুণিজনদের সম্মাননা দেয়া হবে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও উৎসাহিত হবে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের কিছু পেতাত্মা এদেশে এখনো রয়ে গেছে। যার কারণে আমাদের ভাষা, উন্নয়নের প্রতি আঘাত আসে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের কেউ অবহেলা করতে পারে না। নিজেদের প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্বে একটা মর্যাদা পাচ্ছি। আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও কলাকুশলীদের খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসা এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা দেয়া আমাদের দায়িত্ব- যারা আমাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে এবং বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সবার সহযোগিতা দরকার। এছাড়া আগামী প্রজন্মের কাছে দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে আমাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, বিচারপতিবৃন্দ, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, কূটনিতিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হচ্ছেন- ভাষা আন্দোলনে ভাষাবিদ ড. মোঃ শহীদুল্লাহর পুত্র মরহুম ভাষাসৈনিক আ জ ম তকীয়ুল্লাহ (মরণোত্তর) ও শৈল্য চিকিৎসক অধ্যাপক ভাষাসৈনিক মির্জা মাজহারুল ইসলাম, সংগীতে উপমহাদেশের দিকপাল সংগীতজ্ঞ ওস্তাত আয়াত আলী খানের পুত্র বহুগুণে গুনান্বিত শিল্পী ও সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান, শুদ্ধ সংগীত সাধক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও সুরকার সুজেয় শ্যাম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার গীতিকার ও শিল্পী ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পী মোঃ খুরশীদ আলম ও বিশিষ্ট সেতার বাদক ওস্তাদ মতিউল হক খান, নৃত্যে প্রথম শ্রেণির নৃত্যশিল্পী ও কোরিয়গ্রাফার মুক্তিযোদ্ধা বেগম মীনু হক (মীনু বিল্লাহ), অভিনয়ে বিশিষ্ট অভিনেতা মরহুম হুমায়ুন ফরীদি (হুমায়ুন কামরুল ইসলাম) (মরণোত্তর), নাটকে নাট্যকার ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিখিল সেন (নিখিল কুমার সেন গুপ্ত), চারুকলায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার, আলোকচিত্রে গোলাম মুস্তাফা, সাংবাদিকতায় প্রবীন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক ও ভাষাসৈনিক রণেশ মৈত্র, গবেষণায় ভাষা সৈনিক মরহুমা অধ্যাপক জুলেখা হক (মরণোত্তর), অর্থনীতিতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, সমাজসেবায় নিসচার (নিরাপদ সড়ক চাই) কর্ণধার চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ভাষা ও সাহিত্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম খান (কবি হায়াৎ সাইফ), স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক সুব্রত বড়ুয়া, রবিউল হুসাইন ও মরহুম খালেকদাদ চৌধুরী (মরণোত্তর)।
পদক বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে নিজ নিজ পদক গ্রহণ করেন এবং মরনোত্তর একুশে পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের পুত্র ও কন্যাগণ এই পদক গ্রহণ করেন।
ভাষাসৈনিক আ জ ম তকীয়ুল্লাহর (মরণোত্তর) পক্ষে কন্যা সাংবাদিক ও কলামিস্ট শান্তা মারিয়া, মরহুম হুমায়ুন ফরীদির পক্ষে কন্যা শারারাত ইসলাম, মরহুমা অধ্যাপক জুলেখা হকের পক্ষে কন্যা তৃষা হক, মরহুম খালেকদাদ চৌধুরীর পক্ষে পুত্র হায়দার জাহান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পদক গ্রহণ করেন। সাংবাদিক রণেশ মৈত্র বিদেশে থাকায় তার পক্ষে পুত্র প্রলয় কুমার মৈত্র পদক গ্রহণ করেন।
You must be logged in to post a comment.