বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেলেন কুলসুম বিবি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

অবশেষে স্বীকৃতি পেলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার পেরুয়া এলাকার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা কুলসুম বিবি (৭০)।  শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত গেজেটভুক্তির চিঠি হাতে পেয়েছেন তিনি।

পেরুয়া গ্রামে এক ছেলে ও তিন মেয়ের সঙ্গে খুপরি ঘরে দিন কাটছে কুলসুম বিবির। বয়সজনিত নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এই মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।

‘৪৩ বছর পর মুখ খুলল বীরাঙ্গনার পরিবার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশ হয়। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বীরাঙ্গনা কুলসুম বিবির একাত্তরে নির্যাতন ও আত্মত্যাগের ঘটনা জনসমক্ষে উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অমর চাঁদ দাস কুলসুম বিবিকে নিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর বীরাঙ্গনা স্বীকৃতির প্রচেষ্টা চালান। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ২১ জানুয়ারি জামুকার ৫০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। গেজেটভুক্তির পত্রটি গতকাল তাঁর হাতে পৌঁছে।

গেজেটভুক্তির চিঠিটি গতকাল বিকেলে স্থানীয় শ্যামারচর বাজার পোস্ট অফিস থেকে কুলসুম বিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। লেখাপড়া না জানা কুলসুম বিবিকে চিঠিটি পড়ে শোনান অমর চাঁদ দাস। এ সময় আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বৃদ্ধা। পরে এই প্রতিবেদককে মোবাইলে ফোন করে তিনি বলেন, ‘ভাইয়ো, আমার গেজেট অইগিছে। কাগজ পাইলিছি। আমার জন্য তুমি অনেকতা খরছো ভাইয়ো’ (ভাইয়া আমার গেজেট হয়ে গেছে। কাগজ পেয়ে গেছি। আমার জন্য তুমি অনেক কিছু করছো) বলে কেঁদে ফেলেন।

অমর চাঁদ দাস বলেন, একাত্তরে এই এলাকায় নির্যাতিত নারীদের অন্যতম একজন হলেন কুলসুম বিবি। তিনি কোনো ধরনের সংকোচ না করে একাত্তরের নির্যাতনের কথা খুলে বলেন স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর। তাঁকে নিয়ে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর নির্যাতনের শিকার অন্যরাও ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেন। অমর চাঁদ দাস এলাকার বীরাঙ্গনা হিসেবে আবেদনকারী অন্যদেরও দ্রুত স্বীকৃতির দাবি জানান।

দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুলসুম বিবির বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে গত বছরের ২৭ জুলাই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কুলসুম বিবিসহ পাঁচজনকে ‘অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত সাব-কমিটি’ বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে গেজেটভুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর সুপারিশ করে সাব-কমিটি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুদ্দিন ইকবাল বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই তদন্ত করে তাঁর জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে রিপোর্ট দিয়েছি। তাঁর নাম গেজেটভুক্তির খবর অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের।’

সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: