জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডাকে চলছে সর্বাত্মক ধর্মঘট। বিশ^বিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আজ সারাদিন চলবে এই ধর্মঘট।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৮ টা থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচীপালন করছে।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান, কলা ও মানবিকী অনুষদসহ সকল ভবনে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ বয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ, প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন অনুষদের সামনে অবস্থান করছে। কলা ও মানবিকী অনুষদে শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের বাকবিতন্ডা হয়। এসময় প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ক্লাস-পরীক্ষা ও গবেষণা করতে চাই। কেউ আসতে চাইলে কাউকে বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই।’

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আন্দোলন ঠেকাতে শিক্ষকরা পরীক্ষা দিয়ে রেখেছে। নিজেদের বেতন ও ভিসিকে বাঁচাতে মানবন্ধনে যাওয়ার সময় ক্লাস-পরীক্ষার কথা মনে থাকে না।’ ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক তারেক রেজার বিরুদ্ধে ব্যানার ছিড়ে ভিতরে প্রবেশ করার অভিযোগও করা হয়।

আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন,‘শিক্ষক সমিতি একটি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু তারা দুর্নীতির তদন্ত করতে চায় না। তাদের এই আলোচনা স্ববিরোধী এবং তা ফলপ্রসু হবে না।’ আলোচনায় অংশগ্রহনের বিষয়ে জিঙ্গেস করলে এনটিভি অনলাইকে জানান,‘এখনও আমরা সিদ্ধান্ত নেইনি।’

তিনি আরও বলেন,‘আজ সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ বয়েছে। আমরা এমন কঠোর আন্দোলনে যেতে চাইনি। আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে আন্দোলন করতে চাই না। কিন্তু এতো বড় একটা দুর্নীতি হলো সরকারের পক্ষে থেকে যে উদ্যোগ নেওয়ার কথা আমরা তেমন কিছু দেখিনি।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো: দিদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন,‘ দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের অপসারনের দাবিতে সর্বত্মাক ধর্মঘট চলছে। এতোদিন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচীতে যাইনি। এখন বাধ্য হয়েছি। আমরা কাউকে জোর করছি না, বরং শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে।’

প্রসঙ্গত, গতকাল বিকাল ৫ টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্থাপিত উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচীঘোষণা করে। জাবি উপাচার্যের দুর্নীতির তদন্ত ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গত একমাস ধরে চলছে এ আন্দোলন। আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আপাচার্যের অনিয়ম ও দুর্নীতির খতিয়ান জাতির সামনে তুলে ধরে তার অপসারণ দাবি করে।

একইসাথে উপাচার্যের সাথে থাকা নিপীড়নকারী, দুর্নীতিবাজ ও অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত শিক্ষকদের মুখোশ উম্মোচন করে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচী হিসেবে উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।ওই ঘটনার পর থেকেই আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের মদদ আছে বলে প্রচার করতে থাকে ভিসিপন্থী শিক্ষকরা। বিএনপি ও জামায়ত শিবিরের সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন তুলে প্রশাসন। আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য অপচেষ্টা বলে দাবি আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।