পরিহার করুন অপসাংবাদিকতা!

জিল্লুর রহমান মণ্ডল পলাশ:
কোন এক মানকা চিপায় পড়ে, প্রতারনার সহজ কৌশল হিসেবে বা প্রতিদিন চুঙ্গির আশায় অনেকে সাংবাদিক সেজেছেন। আবার স্থানীয়, আঞ্চলিক ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত কিছু কাগজের সঙ্গে মোটা অংকের চুক্তির ভিত্তিতে অনেকে সংবাদ কর্মী পরিচয় দিচ্ছেন।

আর ইদানিং তো আর অনলাইন নিউজ পোর্টালের অভাব নেই। এখন প্রতিদিন অমুক, তমুক, ফলনা, তাসকা ডটকম থেকেও অনেকে আইডি কার্ড নিয়ে সংবাদকর্মী সেজেছেন। পাশাপাশি আমার জন্মের পর থেকে যাদের এ পেশায় দেখি তাদের অনেকে আজও এ পেশা ধরে আছেন। কিন্ত দুর্ভাগ্য তাদের, ঠিক তারা যেমন ছিলেন তেমনি আছেন। নেই কোন ভালো পত্রিকা, নেই কোন ভালো পত্রিকায় কাজ করার ইচ্ছে।

শুধু এলাকার লোকজন চেনেন তিনি সাংবাদিক। আর এই পরিচয়ে ধান্দবাজি আর অপসাংবাদিকতা করে দিন চালান। আমি মনে করি তাদের কোন পরিবর্তন হবেনা। কিভাবে বা হবে আসলে যাদের সাংবাদিকতা বিষয়ে নূন্যতম কোন জ্ঞান নেই, নেই কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, এমনকি সাংবাদিকতা বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণও নেই।

এইসব লোকেরা নাকি আবার অনলাইনে সাংবাদিকতা করবেন। এমন শখ দেখে হাঁসি না কাঁদি…! নাম সর্বস্ব কিছু পত্রিকা বা অনলাইন পোর্টাল এমন কিছু লোকদের নিয়োগ দিয়ে পুরো সাংবাদিক সমাজকে চরম কলুষিত করেই তূলেছে। এসব সংবাদকর্মীর কাজেই হল বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে গিয়ে আইডি কার্ডকে পূঁজি করে নিজেদের বড় মাপের সংবাদিক পরিচয় দিয়ে অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করা।

আর সাংবাদিকতা জগৎ যেটাই হোক না কেন এক শ্রেনীর সংবাদকর্মী নামধারী বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন অফিসের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে পত্রিকায় নিয়োগ দেওয়া ঐ সমস্ত অপসাংবাদিকদের নামে কপি-পেষ্ট সংবাদ সরবরাহ দিয়ে নিজেরাও প্রতিনিয়ত টুপাইস কামাই করছে। জেলার কিছু সংবাদকর্মীদের দম্ভোক্তি দিয়ে বলতে শোনা গেছে সংবাদ লিখতে পারি আর নাই বা পারি তাতে কিছু আসে আর যায়না। পত্রিকা অফিসকে টাকা দিলেইতো বাই নেইমে সংবাদ আসে।

এভাবে অপসাংবাদিকতা প্রসারের ফলে হলুদ সাংবাদিকতার শিকার হচ্ছে নিরহ লোকজন, ন্যায় বিচারে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, আর উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্র। একটি বস্তুনিষ্ট সংবাদ যেমনি ভাবে পারে সমাজ বা রাষ্ট্রকে বদলাতে তেমনিভাবে অপসাংবাদিকতাও পারে জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে।

কেউ ভাববেন না আমি নিজের গর্ব বা প্রশংসার জন্য লেখাটি লেখেছি। আমি শুধু আমার সাংবাদিকতা জীবনের সঞ্চিত বাস্তত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি। সেকারণে নতুন প্রজন্মে এখন যারা মফস্বলে সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করছেন তারা হলুদ ও ‘কপি টু পেস্ট’ সাংবাদিকতা পরিহার করুন।

মফস্বলের তরুণ প্রজন্মের সংবাদকর্মীরা তাদের নিজের লক্ষ ও উদ্দেশ্য ঠিক রেখে মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা দিয়ে সকল বাঁধা বিপত্তি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবেন এই প্রত্যাশা করি।

__________________________________________________

লেখক:
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক যায়যায়দিন।
ইমেইল: zrpalash2009@gmail.com

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3