রাবি চিকিৎসাকেন্দ্র পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক কার্যালয়ে!

রাবি প্রতিনিধি:

রোববার (২ মার্চ), বিকেল ৪টা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রবেশকালে ২০-৩০ জনের একটি জটলা চোখে পড়ে। ভেতরে প্রবেশ করলে ১৩ নম্বর কক্ষের সামনে আরও একটি জটলা দেখা যায়। কাছে গিয়ে দেখা গেল, যারা জটলা পাকিয়ে আছে তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। ১৩ নম্বর কক্ষটি চিকিৎসাকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. আনিকা ফারিহা জামানের। ফারিহা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা মূলত তার সাথে সাক্ষাতের জন্যই এখানে এসেছেন। এটি শুধু এক দিনের চিত্র নয়। প্রতিদিনই ঘটছে এমন ঘটনা। আর তাই একে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় বললে অত্যুক্তি করা হবে না।

অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আনিকার সঙ্গে রাজনৈতিক শলা-পরামর্শ করেন। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা দল বেধে তার সাথে দেখা করতে আসেন। এমনকি চিকিৎসাকেন্দ্রের সীমানায় তারা উচ্চস্বরে দলীয় স্লোগানও দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেডিকেল অফিসার আনিকার সাথে দেখা করতে প্রায় প্রতিদিনই চিকিৎসাকেন্দ্রে ছাত্রলীগ কর্মীরা ভিড় করেন। তাদের হইহুল্লোড়ে একদিকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে হাসপাতালের পরিবেশ, অন্যদিকে এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে।

হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আনিকা প্রতিদিন চিকিৎসাকেন্দ্রে আসার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তার অফিস কক্ষের সামনে ভিড় করা শুরু করেন। এদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী ও তাদের অনুসারী। আনিকা চলে যাওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন। তাদের কেউ কেউ আবার চিকিৎসাকেন্দ্রের অটোমেশন যন্ত্রের মাধ্যমে রোগীর টিকেট কেটে চিকিৎসা করানোর অযুহাতে তার সাথে দেখা করেন।

গত এক সপ্তাহ সরেজমিনে দেখা যায়, আনিকা চিকিৎসাকেন্দ্রে আসার আগেই দিকে চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে ছাত্রলীগ কর্মীরা সেখানে অপেক্ষা করেন। চিকিৎসাকেন্দ্রে আসার পর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা জড়ো হওয়া শুরু করেন। আধ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৪০-৫০ জন সেখানে চলে আসেন। এদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ও তাদের অনুসারী। বিকেল ৫টার দিকে তিনি চলে যাওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন।

চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. খোরশেদ বলেন, ‘পায়ের সমস্যার চিকিৎসা নিতে পরপর দু’দিন চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। দুই দিনই ৩০-৪০ জন নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। এতো লোকজন থাকায় চিকিৎসাকেন্দ্রের পরিবেশ নষ্ট হয়।’

জানতে চাইলে মেডিকেল অফিসার আনিকা ফারিহা জামান বলেন, ‘আমার কর্মক্ষেত্রে না আসার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও অনেকে চলে আসছে। আমি চেষ্টা করি যতটা সম্ভব তাদের দূরে রাখতে। আর রোগীদের যেন কোন সমস্যা না হয় সেদিকেও নজর রাখি।’

নিষেধ করার পরও কি নির্দেশ অমান্য করে চিকিৎসাকেন্দ্রে আসছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা কিসের জন্য আমার সাথে দেখা করতে আসছে তা আমি জানি না। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল কমিটির জন্য এসেছিলো। এখন হয়তো রাবি শাখা ছাত্রলীগের পদের আশায় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের জন্য আসছে।’

অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগে পদ প্রত্যাশী ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সরকার ডন বলেন, ‘চিকিৎসাকেন্দ্রে তার সাথে দেখা করতে গেলে অফিস সময়ের পরে গিয়েছি। অফিস সময়ে দু’য়েকবার গিয়েছিলাম চিকিৎসা নিতে।’

অভিযোগের বিষয়ে আরেক পদ প্রত্যাশী ও ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-সম্পাদক সৌমিত্র কর্মকার রানা বলেন, ‘ভালোবাসার জায়গা থেকে নেতা-কর্মীরা হয়তো তার সঙ্গে দেখা করতে যায়। তবে তিনি অফিস চলাকালীন কারো সঙ্গে সাক্ষাত করেন না।’

চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, ‘চিকিৎসাকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ না করতে আমি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বলেছিলাম।’

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3