আট দেশে যাচ্ছে রাজবাড়ীর মিষ্টি পান

রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
পান চাষে উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা। এ অঞ্চলের পানের সুখ্যাতি বহু পুরনো। এখানে সাধারণত দুই জাতের পান উৎপাদন হয়। মিষ্টি পান আর সাচি পান। এই মিষ্টি পান রপ্তানি হচ্ছে আটটি দেশে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় মাঝেমধ্যেই বেকায়দায় পড়তে হয় পান চাষিদের।

কয়েকজন চাষি জানায়, বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতেঙ্গা, চরআড়কান্দি, ইলিশকোল, স্বর্প বেতেঙ্গা, খালকুলা, বালিয়াকান্দি ও বহরপুর এলাকায় ব্যাপকভাবে পানের আবাদ হয়। তাঁদের পূর্বপুরুষরা পান চাষ করত। তারা ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এ অঞ্চলে সাচি ও মিষ্টি পান প্রচুর জন্মে। মিষ্টি পান রাজবাড়ীসহ পাশের জেলার চাহিদা মিটিয়ে ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সৌদি আরব, কুয়েত ও পাকিস্তানে রপ্তানি করা হয়। এতে অর্জন হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। তবে পান চাষ লাভজনক হলেও চাষিদের মাঝেমধ্যেই পড়তে হয় নানা সমস্যায়। পানে রোগ হলে সঠিক পরামর্শ পাওয়া যায় না। পান চাষে নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও।

পান চাষিদের অভিযোগ, পানের রোগ হলে কৃষি কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে তেমন কোনো পরামর্শ দিতে পারেন না। গত বছর পানের গোড়া পচা রোগ দেখা দেয়। এতে চাষিদের লোকসান গুনতে হয়। এ বছর লাভের আশা করলেও আগামী বৃষ্টির মৌসুমে কী হবে, সেই শঙ্কা বিরাজ করছে। তাই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার দাবি জানান চাষিরা। পান চাষি উত্তম কুমার সাহা বলেন, গত শৈত্যপ্রবাহে পান পাতা ঝরা রোগ দেখা দেয়। তখন তাঁরা উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে পরামর্শ নেন। ওই রোগ থেকে পান মোটামুটি রক্ষা করা গেছে।

পান চাষিরা জানায়, অর্থকরী ফসল হলেও পান চাষে তাঁরা সরকারি সহযোগিতা পান না। কৃষি অফিস থেকেও কোনো সহযোগিতা মেলে না। সরকারিভাবে তাদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে পান চাষকে আরো লাভজনক ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে।

আড়তদার বিষ্ণুপদ লস্কর বলেন, এখানে বছরে এক পাখিতে (২৫ শতাংশ) যে পান উৎপাদিত হয় তা রপ্তানি করে চার লাখ টাকা পাওয়া যায়। চাষিরা ব্যাংক ঋণ পেলে আরো বেশি পান উৎপাদন করতে পারতেন। এতে রপ্তানি বাড়ত। দেশ উপকৃত হতো।

সম্প্রতি বালিয়াকান্দি পান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পানের আড়ত বসেছে। চাষিরা ক্ষেত থেকে পান এনে বিক্রি করছেন। এখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারীরা এসে পান কেনেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলী খান জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৬৫৮টি বরজে মিষ্টি পান ও ১৫৬টি বরজে সাচি পানের চাষ হয়েছে। এতে জমির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬৮ ও ১৬ হেক্টর।

এখানকার মিষ্টি পান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে আটটি দেশে রপ্তানি করা হয়। তবে পান চাষে কোনো বই বা পানের রোগ প্রতিরোধে ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় মাঝেমধ্যে অসুবিধায় পড়তে হয় কৃষি কর্মকর্তাদের। তবে বরজে পানি ও ছাউনি দেওয়া, কুয়াশা থেকে পান রক্ষা, মাটি ইত্যাদি বিষয়ে চাষিদের সাধারণ পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান মাহবুব আলী খান।

সূত্র: কালেরকন্ঠ

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: