ঝালকাঠিতে জলাতঙ্কের টিকা সংকট চরমে

বরগুনা সংবাদদাতা:
ঝালকাঠিতে জলাতঙ্করোধী টিকার (অ্যান্টি রেবিস ভ্যাকসিন) সংকট চরমে পৌঁছেছে। চার দিন ধরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও জেলার তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরে কামড়ানো রোগীরা এসে টিকা পাচ্ছেন না। ফলে বাইরে থেকে চড়া দামে টিকা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৪ থেকে ৩১ মার্চ দুপুর পর্যন্ত এক সপ্তাহে কেবল সদর হাসপাতালে ৭৭ জন কুকুরে কামড়ানো রোগীকে জলাতঙ্করোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। এরপর হাসপাতালে কোনো টিকা নেই। ফলে ৩১ মার্চ দুপুর থেকে কুকুরে কামড়ানো রোগীরা হাসপাতালে এলেও তাঁদের টিকা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এখন প্রতিদিনই হাসপাতালে গড়ে ৮-১০ জন করে রোগী আসছেন, কিন্তু তাঁদের টিকা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। একইভাবে নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অনেক রোগী টিকা দিতে এসে ফিরে গেছেন বলে এসব হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান। টিকা সরবরাহ করতে না পারায় এসব হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারীদের রোগী ও তাঁদের স্বজনদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও জানান তাঁরা।

রাজাপুর উপজেলার স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার পরিচালক সৈয়দ কামাল হোসেন বলেন, ‘দুই দিন আগে কুকুরে কামড়ানোর পর আমি প্রথমে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে টিকা নিতে গিয়েও টিকা পাইনি। পরে বাইরে থেকে চড়া মূল্যে টিকা কিনতে হয়েছে। এ রকম প্রতিদিন অনেক রোগী হাসপাতালে এসে টিকা পাচ্ছেন না।’

ওষুধ ব্যবসায়ী চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাছে তিন ধরনের জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা রয়েছে। এসব টিকার মূল্য খুবই চড়া। এর মধ্যে ভারতের তৈরি ‘রেবিপুর’ নামের ওই টিকার প্রতি ডোজের মূল্য ৬৪০ টাকা। সে হিসাবে পাঁচ ডোজের (প্রত্যেক রোগীর পাঁচ ডোজ টিকা লাগে) মূল্য ৩ হাজার ২০০ টাকা। ফ্রান্সের তৈরি ‘ভেরোরাব’ নামে অপর একটি টিকার প্রতি ডোজের মূল্য ৬৪০ টাকা। সে হিসাবে পাঁচ ডোজের মূল্য ৩ হাজার ২০০ টাকা। আর দেশি ‘রেভিক্স ভিসি’ নামের টিকার প্রতি ডোজের মূল্য ৫০০ টাকা। সে হিসাবে এই টিকার পাঁচ ডোজের মূল্য ২ হাজার ৫০০ টাকা। এত চড়া মূল্যে বাইরে থেকে টিকা দেওয়া গরিব রোগীদের পক্ষে কষ্টসাধ্য।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সহকারী মণীন্দ্র নাথ বলেন, কয়েক দিন ধরে ঝালকাঠিতে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা আকস্মিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে জলাতঙ্করোধী টিকার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন তাদের রোগীদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে। টিকার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একাধিকবার জানানোও হয়েছে, কিন্তু ঢাকা থেকে টিকা সরবরাহ না করায় পাওয়া যাচ্ছে না।

মণীন্দ্র নাথ জানান, ২৪ থেকে ৩১ মার্চ দুপুর পর্যন্ত তাঁরা ৭৭ জন কুকুরে কামড়ানো রোগীকে টিকা সরবরাহ করতে পেরেছেন। এরপর হাসপাতালের ভান্ডারে কোনো টিকা নেই।

ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘জলাতঙ্কের টিকা শেষ হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আশা করি শিগগিরই তা পাওয়া যাবে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: