শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েও যারা বদলে দিয়েছেন বিশ্বকে (পর্ব- ২)

স্টাফ রিপোর্টার:

শারীরিক অক্ষমতার সাথে লড়াই করে জীবনে সফল হয়েছেন এমন মানুষদের লড়াই গল্প নিয়ে এই ফিচার। যেখানে আমরা জানব, জীবন কঠিন হলেও কিভাবে চালিয়ে যেতে হয় লড়াইটা। আজকের তরুণরা যেখানে প্রেমের ব্যার্থতা, চাকরীজীবনের হতাশাসহ বিভিন্ন কারণে নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে দ্বিধা বোধ করে না সেখানে কিছু মানুষ জন্মেছেনই অক্ষমতা নিয়ে। এই অক্ষমতা পরিবর্তনযোগ্য নয়, চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হবার পথ নেই। তারা মেনে নিয়েছেন সেটা, কিন্তু কিছুই করতে পারবেন না জীবনে এটা মেনে নেন নি। জানব তাদের কথা। আজ দ্বিতীয় পর্ব-

বিটোভেন
রোমান্টিক এবং ক্লাসিক্যাল মিউজিক কম্পোজার বিটোভেন জন্মগ্রহণ করেন জার্মানির এক সঙ্গীতশিল্পী পরিবারে। কিশোর বয়স থেকেই তার শ্রবণ ক্ষমতা কমতে থাকে। পরে তিনি সম্পূর্ণরূপে বধির হয়ে যান। কিন্তু এই অক্ষমতা তার সাথে সংগীতের বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে নি। আধুনিক সিম্ফোনি অর্ক্রেস্টার প্রচারে অগ্রবর্তী বিটোভেন নিজেকে সঙ্গীত জগতের এক কিংবদন্তী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।

জেসিকা কক্স
শুধু পা ব্যবহার করে প্লেন উড়িয়েছেন তিনি। এমন কাজে তিনিই প্রথম আর পরিচিতিও সে কারণেই। জেসিকা জন্ম গ্রহণ করেন দুই হাত ছাড়া। কিন্তু শারীরিক এই অপূর্ণতা তাকে তার লক্ষ থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে নি। তিনি মনোবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েট করেছেন, তায়কোয়ান্ডোতে অর্জন করেছেন ব্লাক বেল্ট, ভালবাসেন গাড়ি চালাতে। এছাড়াও জেসিকা প্রতি মিনিটে ২৫টা শব্দ টাইপ করতে পারেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে তিনি চোখে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরতে পারেন নিজে নিজেই। তিনি একজন প্রেরণাদায়ী বক্তা এবং শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যাক্তিদের তাদের মানসিকতা ইতিবাচক করার ব্যাপারে উৎসাহিত করে থাকেন।

সিন সোয়ারনার
চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিস্ময়, সিন সোয়ারনার দুই বার পরাজিত করেছেন ক্যান্সারের মত ভয়ংকর রোগকে। তিনি ১৩ এবং ১৫ বছর বয়সে পালাক্রমে হডকিন্স ব্যাধি এবং আস্কিন্স সারকোমায় আক্রান্ত হন। জীবনের সকল প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া সিন প্রথম ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফিরে আসা মানুষ যিনি জয় করেছেন মাউন্ট এভারেস্ট। তিনি এখনো বলেন, আমি জানি না আমি কিভাবে বেঁচে আছি! তিনি ক্যান্সার রোগীদের জীবনের প্রতি আশা জাগিয়ে তুলতে কাজ করার কোন সুযোগ ছাড়েন না।

রান্ডি পাউসচ
কার্ণেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তিনি। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বারে প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মারা যান ২০৮ সালের ২৫ জুলাই। রান্ডি বিখ্যাত তার একটি অসাধারণ বক্তব্যের জন্য, নিজের ছেলেবেলার স্বপ্নকে সত্যি করার উপরে বক্তব্যটি তিনি রাখেন ২০০৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বার, সি এম ইউ অডিটোরিয়ামে। তার উপস্থাপনার চমৎকারিত্ব এবং জীবনের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে সোজাসাপ্টা বক্তব্য মিলিয়ন মিলিয়ন ইন্টারনেট ভিউয়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার জীবন দর্শন ছিল, কিভাবে স্বপ্নকে সফল করছেন সেটা বিষয় নয়। বিষয় হল, কিভাবে জীবনকে পরিচালিত করছেন। পরবর্তীতে তার বক্তব্যটি বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং ৩৫টি ভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। ক্যান্সারকে তিনি হারাতে পারেন নি। কিন্তু জীবঙ্কে তিনি একটি মানে দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন পূরণে ক্যান্সার কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি।

জীবনযুদ্ধে এই মানুষগুলোর সামনে ছিল একটাই কথা- আমিও পারি। তারা জেনেছিলেন, হার মানা যাবে না কখনো। এই শিক্ষাই হতে পারে আমাদের প্রেরণা, যার হাত ধরে বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমরাও হতে পারি সফল একজন মানুষ।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: