রহমান হিমাগারে পচছে আলু, কাঁদছে চাষি

মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

হিমাগার নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই চলতি বছরের গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জমকালোভাবে উদ্বোধন করা হয় রাজশাহীর তানোর উপজেলার দেবীপুর মোড় নামক স্থানে রহমান পটেটো কোল্ড স্টোর। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদেশী কোম্পানির এজেন্টসহ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ হোসেন।

সেই সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে এলাকার জনপ্রতিনিধি ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দাওয়াত করে দুপুরের রাজকীয় ভোজে আপ্যায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু এসব ভিআইপি অতিথিদের বোকা বানিয়ে হিমাগারটির মালিক তার স্বার্থসিদ্ধির জন্য অব্যবস্থাপনার মধ্যে চাষীদের আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। ফলে চাষীদের সংরক্ষণকৃত আলু হিমাগারেই পচে নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, পচা আলুর দূর্গন্ধে হিমাগারটির চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে আসছে। এই হিমাগারের সামনেই তানোর-আমনুরা মেইন সড়ক। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে পচা আলুর এমন দূর্গন্ধ পাচ্ছে মানুষ। এলাকাবাসী বলছে, হিমাগারের পচা আলুর দূর্গন্ধে আশপাশে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন তারা।

এতো কিছুর পরেও নিরব রয়েছে ‘রহমান পটেটো কোল্ড স্টোরের’ কর্তাব্যক্তিরা। বরং ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কোন ধরনের সহায়তা করা ছাড়াই তারা পুনরায় এই স্টোর থেকে আধা কিলোমিটার পূর্বে একই রাস্তার ধারে ‘রহমান পটেটো কোল্ড স্টোর-০২’ নামে আরেকটি হিমাগার নির্মাণ করছেন।

তানোর পৌর এলাকার আলু চাষী হিরো জানান, আলুর বাজার একেবারে নিম্নমূখী। উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা হিমাগারের ভাড়া দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। এরমধ্যে হিমাগারে রাখা আলু অব্যবস্থাপনায় পচে নষ্ট হচ্ছে। তানোর উপজেলার দেবীপুর মোড়স্থ রহমান হিমাগারে তিনি ৩৫০ বস্তা আলু রেখেছেন। বিক্রি করার জন্য হিমাগারে গিয়ে দেখেন তার প্রতিবস্তায় প্রায় ২০ কেজি করে আলু পচে গেছে।

হিমাগারে গিয়ে কথা হয় আলু ব্যবসায়ী শাহিনের সঙ্গে তিনি জানান, সাইফুল নামের এক আলু চাষী ১৩ বস্তা আলু রেখে শুধু ৭ বস্তা ভালো আলু পেয়েছেন। বাকিগুলো পচে যাবার কারণে ফেলে দেয়া হয়েছে। আলু চাষী লুৎফর রহমান জানান, তিনি ৫০০ বস্তা আলু রহমান হিমাগারে রেখেছেন। হিমাগারে অব্যবস্থাপনার কারণে তার প্রায় ৫০ বস্তা আলু পচে গেছে। শুধু সাইফুল ও লুৎফর নয় একই ধরণের কথা জানান অর্ধ শতাধিক আলু চাষীরা।

হিমাগারটির ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেছেন, চাষীরা বাছাই করে আলু রাখেন নি। একারণে হিমাগারে রাখা আলুতে পচন ধরেছে। যারা বাছাই করে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছেন। তাদের আলু ভালই আছে বলে কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান এই ম্যানেজার।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, হিমাগারে আলু পচনের ব্যাপারে অধ্যবদি কোন কৃষকের অভিযোগ পাওয়া যায় নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3