বরিশালে চাষ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ফল ‘সাম্মাম’

বরিশাল প্রতিনিধি:
সৌদি আরবসহ মরু প্রধান দেশের বেশ জনপ্রিয় ফল সাম্মাম। ফলটি সাধারণত দুই ধরনের হয়। হলুদ মসৃণ আবৃত খোসার ফলটির ভেতরের রং পাকা পেঁপের মতো। অন্যটি খোসার অংশ খসখসে ও ভেতরে অংশে হালকা হলুদ এবং বাদামি বর্ণের। খেতেও খুব মিষ্টি। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের মাধ্যমে পরিচিত এ ফলটি এখন চাষ হচ্ছে বরিশাল নগরীতে।

নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের করমজা এলাকায় সৌখিন চাষি মোঃ গিয়াস উদ্দিন লিটু (৪৫) এবার সাম্মামের চাষ করেছেন। প্রথমবারের মতো তার ফলনও ভালো হয়েছে। তাই পাইকারি বিক্রির পাশাপাশি লিটু নিজেও এ ফলটি খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন। হলুদ রঙের এ ফলটি দেখতে ভিন্নরকম হওয়ায় এবং খেতে খুবই মিষ্টি হওয়ায় অনেকেই কিনছেন সাম্মাম। তবে এদেশের মানুষের কাছে রহস্যে ঘেরা এ ফলটি একনজর দেখতেই বেশি মানুষ ভিড় করছেন চাষি লিটুর কাছে।

গিয়াস উদ্দিন লিটু চাষাবাদ সম্পর্কে বলেন, সাম্মাম ফল সাধারণত খোলা মাঠে চাষ করা বা উৎপাদন করা অনেক কঠিন কাজ। খোলা মাঠে চাষ করতে গেলে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। কারণ এটি অনেক স্পর্শকাতর একটি ফসল। এটা মরুর দেশের ফল হলেও আমাদের এখানে এর সফল চাষ হলো। তবে চাষে লক্ষণীয় মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে হতে হবে, যাতে তলদেশ পর্যন্ত সেচের ব্যবস্থা হয়, মাটির উপরের অংশে কোনোভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবেনা।

বরিশাল মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা হক বলেন, সাম্মাম ফলটি মূলত মরুভূমি অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে সৌদিআরবসহ অন্য মরভূমির দেশ থেকেই এ ফলের বীজ আনা হয়েছে। বরিশালে শুধু গিয়াস উদ্দিন লিটুই সাম্মাম ফলের চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি বেশ লাভবান হচ্ছেন। কারণ দেশি ফলের চেয়ে সাম্মামের দাম একটু বেশি, উৎপাদন খরচ কম। মাচায় চাষ করতে হয় সাম্মাম। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম। বরিশালের আবহাওয়া সাম্মাম চাষের জন্য যথেষ্ট অনুকূল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শৌখিন চাষি গিয়াস উদ্দিন লিটু জানান, নতুন জাতের ফল উৎপাদনের নেশায় গত ৪/৫ মাস আগে ঢাকার সিদ্দিকবাজারের একটি বীজের দোকানে গিয়ে তিনি বাংলাদেশে উৎপাদন সম্ভব এমন বিদেশি ফলের বীজ খোঁজেন। তখন পেয়ে যান সাম্মামের বীজ। মাত্র ১০ গ্রাম বীজ কিনে আনেন ৫০০ টাকায়। তিনি আরও জানান, প্রথম চাষেই প্রচুর সাম্মাম ফলেছে। তবে প্রথম ধাপের সব ফল বিক্রি হলে আবার বীজ বপন করবেন। গত দুই সপ্তাহে তিনি প্রায় ২০০ কেজি সাম্মাম বাজারে বিক্রি করেছেন। অনেকে আকৃষ্ট হয়ে বাড়ি এসে বাগান থেকে সাম্মাম নিয়ে যাচ্ছেন খাওয়ার জন্য। ফল বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি দেড়শ’ টাকা কেজি দরে এবং খুচরা ক্রেতাদের কাছে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। গিয়াস উদ্দিনের প্রতিবেশি মনিরুজ্জামান জানান, তিনি সাম্মাম খেয়েছেন। পাকা ফলের স্বাদ অত্যন্ত মিষ্টি। রং পাকা পেঁপের মতো।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বরিশালে চাহিদা অনুযায়ী ফলের আবাদ কম। তাই কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে দেশি-বিদেশি ফল ও ফসল উৎপাদনে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গিয়াস উদ্দিন সাম্মাম উৎপাদন করে কৃষি বিভাগের নজর কেড়েছেন। তাকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নগরীসহ জেলার অন্যান্য উপজেলার কৃষকদের সাম্মাম চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: