হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষে সাফলতা পেল বারি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
লেটুস পাতার পর হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে (মাটি ছাড়া শুধু পানিতে) এবার স্ট্রবেরি চাষে সাফল্য পেয়েছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (বারি)। নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়া দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের বেডে স্ট্রবেরির চারা লাগানোর মাত্র দুই মাসের মধ্যেই আশাতীত সাফল্য পাওয়ায় খুশি কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে যারা স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী তাদেরকে এখন এ কেন্দ্র থেকেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।

বারি, চট্টগ্রামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম হারুনর রশীদ জানান, গত বছরের (২০১৯ সাল) ২৬ নভেম্বর আমরা বারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মাঠে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের নেট হাউস তৈরি করে কিছু স্ট্রবেরির চারা রোপণ করেছিলাম। মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে স্ট্রবেরি পেকে গেছে। অর্থাৎ আমরা সফলভাবে হাইড্রোফনিকে বারি স্ট্রবেরি-২ ও বারি স্ট্রবেরি-৩ নামের উচ্চফলনশীল এ দুই জাতের স্ট্রবেরি উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম হারুনর রশীদ বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সবজি বিজ্ঞান বিভাগ এই প্রযুক্তি কয়েক বছর আগেই উদ্ভাবন করেছে। চট্টগ্রাম বিভাগে এই প্রযুক্তিটি এই প্রথম আমাদের গবেষণায় আমরা নিয়ে এসেছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে হাইড্রোফনিকে উৎপাদিত স্ট্রবেরি হার্ভেস্ট (ফসল তোলা) করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনর রশীদ বলেন, সচ্ছল পরিবারের লোকজন চাইলেই বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা ছাদে নেটহাউস বানিয়ে এই সুস্বাদু স্ট্রবেরি চাষ করতে পারেন। চট্টগ্রামে অনেক ধণাঢ্য লোক আছেন। আমরা তাদেরকে সৌখিন চাষী হিসেবে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। মাটি ছাড়া পানিতে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী করতে আমরা বারি, চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও চাষাবাদের উপকরণ প্রদানে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।

স্ট্রবেরির চারা কোথায় পাওয়া যাবে, জানতে চাইলে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনর রশীদ বলেন, এ প্রযুক্তিতে চাষ করতে হলে তার চারাটা মাটিতে করা যাবে না। তার চারাটা একটি বিশেষ ধরণের ট্রেতে করতে হবে। এসব প্লাস্টিকের ট্রে বাজারে পাওয়া যায়। এই ট্রেতে নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে এর মধ্যে বিজ রোপন করে দিতে হবে। এরপর বিজ যখন চারা হয়ে যাবে তখন এই চারা মূল যে চাষের ট্রে রয়েছে ওখানে রোপণ করে দিতে হবে। মাঠের চারা এনে লাগানো যাবে না। কারণ মাঠের চারায় জীবাণু থাকতে পারে।

হাইড্রোফনি পদ্ধতিতে বারি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রে উৎপাদিত দুই জাতের স্ট্রবেরি মধ্যে রয়েছে বারি স্ট্রবেরি -২ ও বারি স্ট্রবেরি-৩।

বারি স্ট্রবেরি-২: বাংলাদেশে সর্বত্র চাষোপযোগী একটি উচ্চফলনশীল জাত। জাতটি আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে সংগ্রহপূর্বক বাংলাদেশের আবহাওয়া অভিযোজন পরীক্ষাপূর্বক বাছাই পদ্ধতিতে মুক্তায়ন করা হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথমে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। গাছপ্রতি গড়ে ৩৭টি ফল ধরে। গাছপ্রতি গড় ফলন ৭৪০ গ্রাম। হৃৎপিন্ডাকৃতির ফল বেশ বড় আকারের, প্রান্তভাগ চ্যাপ্টা। পাকা ফল আকর্ষণীয় টকটকে লাল বর্ণের। ফলের ত্বক মধ্যম নরম ও ঈষৎ খসখসে। ফলের শতভাগ খাবারযোগ্য। স্ট্রবেরির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সুগন্ধযুক্ত ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি।

বারি স্ট্রবেরি-৩: এটিও বাংলাদেশে সর্বত্র চাষোপযোগী। জাতটি আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে সংগ্রহ করা এ জাতটিতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বর শেষ ভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। গাছপ্রতি গড়ে ৩৯টি ফল ধরে। গাছপ্রতি গড় ফলন ৭৭০ গ্রাম। হৃৎপিন্ডাকৃতির ফল বেশ বড় আকারের লম্বাটে, প্রান্তভাগ চোখা। পাকা ফল আকর্ষণীয় টকটকে লাল বর্ণের। ফলের ত্বক তুলনামূলক শক্ত ও ঈষৎ খসখসে। ফলের শতভাগ খাওয়ারযোগ্য। সুগন্ধযুক্ত ফলের স্বাদ টকমিষ্টি।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: