ভুট্টাচাষে আগ্রহ বাড়ছে মিরসরাইয়ের কৃষকদের

নিউজ ডেস্কঃ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। অনাবাদি ও এক ফসলি জমিতে ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক কৃষক। গত বছরের তুলনায় এবছর অনেক বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। পতিত জমিতে ভুট্টা আবাদ করে বাড়তি আয় করছেন তারা। মূলত এ কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তিন গুণের বেশি জমিতে কৃষিপণ্যটির আবাদ হয়েছে। আগামীতে এর পরিধি আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ৩৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে ১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করেছেন নাহার এগ্রো গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের জমিতে চাষের পাশপাশি অন্য জমি লিজ নিয়ে চাষ করছেন এবং কৃষকদের অনাবাদি ও এক ফসলি জমিতে ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। অনেক কৃষক এবার প্রথমবার ভুট্টা চাষ করে ভালো লাভের মুখ দেখেছেন এবং আগামীতে আরো ব্যাপক আকারে এই কৃষিপণ্যটি চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ডেইরি শিল্প দ্রুত বাড়ছে। গড়ে উঠেছে বড় আকারের একাধিক খামার। এসব ফার্মে গরুকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিবছর অনেক ভুট্টার প্রয়োজন হয়। আগে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ক্রয় করা ভুট্টা দিয়ে প্রয়োজন মেটানো হতো। এখন এখানকার চাষ করা ভুট্টা দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এছাড়া দেশের সবচেয়ে বড় ডেইরি খামার নাহার ডেইরি খামার মিরসরাইয়ে রয়েছে, এজন্য ভুট্টার চাহিদাও বেশি।

উপজেলার ডোমখালী এলাকায় এবার ৩০ শতক জায়গায় ভুট্টার আবাদ করেছেন আরবিসি এগ্রিকালচারের স্বত্ত্বাধিকারী শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রথমবারের মত আমার খামারের খরুর খাদ্যের জন্য ভুট্টার চাষ করেছি। ৩০ শতক জায়গায় ৩০ মণ ভুট্টা পেয়েছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আরো বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ করবো।

সোনাপাহাড় এলাকার কৃষক দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, পাহাড়ের পাশে আমার কিছু জমি রয়েছে, সেই জমিতে বছরে শুধু একবার ধান চাষ করা যায়। নাহার এগ্রোর এক কর্মকর্তার পরামর্শে এবার ভুট্টার আবাদ করেছি। ভুট্টা আবাদে খরচ তুলনামূলক কম। মাত্র দুবার সেচ দিলেই হয়।

নাহার এগ্রো গ্রুপের জিএম মনোজ কুমার চৌহান জানান, উপজেলার পতিত কৃষিজমি ভুট্টা আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গরুর খাদ্য হিসেবে আগে আমরা নিজেদের জমিতে ভুট্টা চাষ করতাম এবং চাহিদার বাকিটা বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হত। এবার আমরা ১৪০ একর জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। মিরসরাই উপজেলা ছাড়াও দাউদকান্দিতে জমি লিজ নিয়ে আবাদ করা হয়েছে। অনাবাদি ও এক ফসলি জমিতে ভুট্টা চাষের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি একাধিক কৃষককে জমির আয়তন অনুযায়ী উৎপাদন খরচ দিয়ে ভুট্টা আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তারা উৎপাদিত ভুট্টা ন্যায্যমূল্যে আমাদের কাছে বিক্রি করতে পারছেন।

তিনি আরো জানান, প্রতি একর জমিতে ১০ থেকে ১১ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন সম্ভব। সারাবছরই ভুট্টা চাষ করা যায়। তবে অক্টোবর-নভেম্বরে চাষ করা ভালো। আমরা মূলত এগুলো মিক্সার করে শীতকালে গরুকে খাওয়নোর জন্য রিজার্ভ রাখি। আধুনিক মেশিনের মাধ্যেমে সাইলেজ তৈরি করা হয়।

জানা গেছে, ডেইরি খামারে গো-খাদ্য হিসাবে ভুট্টার গাছ, পাতা, কাণ্ড ও দানা থেকে পুষ্টিকর সাইলেজ তৈরি হওয়ায় বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। যার ফলে শাক-সবজির পাশাপাশি ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে প্রত্যন্তঞ্চলের কৃষকদের।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, পশু খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় নিশ্চিতকরণে গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টা গাছ থেকে পুষ্টিকর সাইলেজ তৈরি হচ্ছে। এতে করে একদিকে ভুট্টা চাষ বাড়বে অন্যদিকে গো-খাদ্যের সংকট দূর হবে।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, মিরসরাই উপজেলায় ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। আমরাও কৃষকদের ভুট্টা আবাদে উৎসাহ দিচ্ছি। কারণ ভুট্টা আবাদ করে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। কেননা ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: