রূপবান জাতের শিম চাষ করে কৃষকরা লাভবান

নিউজ ডেস্কঃ

শিম শীতকালীন সবজি। কিন্তু গ্রীষ্মে আগাম লাগানো রূপবান জাতের শিম চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
খুলনার শস্যভান্ডার খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চাষ করা হয়েছে আগাম রূপবান প্রজাতির শিম। রূপবান জাতের শিম চাষ করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই বর্ণাঢ্য শিমের ফুলে প্রকৃতি যেন একাকার। চলতি মৌসুমের শুরুতেই এমনি মনোরম দৃশ্যে শিমের ফুলে ভরে উঠেছে ডুমুরিয়ার মাঠ-ঘাট, খাল-বিল ও ঘের-পুকুরের পাড় জুড়ে। হাতছানি দিচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার এক অন্যরকম দৃশ্য। আগাম শিম চাষ করে উচ্চ ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা। বর্তমানে শিমের ভাল বাজার মূল্যে পেয়েও খুশি তারা। ফলে অন্য এলাকার চাষিরা বর্তমান গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

চলতি মৌসুমের শুরুতেই আগাম শিম চাষ করেছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকরা। সেখানের প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ির আঙ্গিনায়, মাছের ঘের, পুকুরের পাড়ে, মাঠে ও বিলে লাল ফুল জাতের শিম চাষ করা হয়েছে।

সবজির চাষের শস্যভান্ডার খ্যাত এ অঞ্চলে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি ক্ষেতেই দোলা দিচ্ছে শিমের ফুল, আর শিমে। বাজারে ভাল দাম ও গাছে বেশ ফলন আসায় ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জৈষ্ঠ্য মাসের শেষেই লাল ফুল জাতের আগাম শিম বীজ বপন করা হয়েছিল। আর ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই শিম উঠতে শুরু হয়েছে। এ বছর প্রচুর পরিমানে শিমের উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে এ অঞ্চলটিতে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার ডুমুরিয়ায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জনের অধিক কৃষক ১ হাজার ৪০০ হেক্টর মৎস্য ঘেরের পাড়ে তথা ১৫০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করেছেন। আশা করা হচ্ছে, প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন করে প্রায় ৪ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। এখানে লাল ফুল জাতের শিমের বেশি ফলন হয়ে থাকে। তাই প্রায় ৯৫ শতাংশ জমিতেই লাল ফুলের শিম আবাদ করা হয়েছে।

বর্তমানে বাজারে শিমের উচ্চ মূল্য রয়েছে। ভাদ্র মাসের শুরুতে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি পাইকারি দরে শিম বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পাইকারি দরে শিম বিক্রি হচ্ছে। তবে দিন যতো যাচ্ছে, ততোই শিমের ফলন বাড়ছে, তাই কিছুদিনের মধ্যে দামটা কমে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

ডুমুরিয়ার পাঁচপোতা গ্রামের কৃষক ইলিয়াস বলেন, ছোটকাল দেখেছি শিম লাগানো হতো ভিটে বাড়িতে। জমিতে হতো ধান। এখন চাহিদা বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে তাই শিম চাষ করতে জমি, ভিটা, রাস্তাঘাট, খাল কিছুই বাদ নেই। যার যেখানে জমি ফাঁকা আছে শিম গাছ লাগিয়েছে। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানিতে অথবা শিশিরে ফুল ভিজে শিমের পঁচে যেত। কিন্তু বর্তমানে শিমের উন্নত জাতের উদ্ভাবনের কারণে ওই ধরনের সমস্যা নেই, এখন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই শিম চাষ করা যাচ্ছে। তাই সকলে শিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, শিম চাষ করে আমরা বেশ লাভবান হওয়ার আশা করছি। চার বিঘা ঘেরের পাড়ে শিম চাষ করেছি। যেভাবে ফলন এসেছে তাতে সকল খরচ করে প্রায় ৮০ ঝাজার থেকে ১ লাখ টাকার মত লাভ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিম চাষ খুব ভালো হয়েছে। আগাম চাষে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। শিম উৎপাদন করতে কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায়। উপজেলা কৃষি অফিস শিম চাষীদের বিভিন্ন সময় এসব ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ডুমুরিয়ার শিমের কদর সারা দেশ জুড়ে রয়েছে। কৃষকরা যাতে শিমের ন্যায্য মূল্য পায়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: