দ্বিগুণ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ

নিউজ ডেস্কঃ

বাজারে চাহিদার পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ বাড়ছে। এ ফসল উৎপাদন খরচ বাদে বিঘাপ্রতি এক-দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে কৃষকদের। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ফসলটির প্রায় দ্বিগুণ চাষ বেড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ছয়টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে ৬৪ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর, কলারোয়ায় ৪০, তালায় ১০, কালীগঞ্জে ২, আশাশুনিতে ১ ও শ্যামনগর উপজেলায় ১ হেক্টর, যা গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছিল ৩৬ হেক্টর পরিমাণ জমিতে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কামারালী গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা পরিমাণ জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদন করে ২ লাখ টাকা লাভ হয় তার। দুই বিঘা জমির টমেটো উৎপাদনে তার খরচ হয়েছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সেখানে দুই বিঘা জমির টমেটো বিক্রি করেন ৫ লাখ টাকা।

কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলতি মৌসুমে গাছে যে পরিমাণ ফলন এসেছে তা গতবারের চেয়ে লাভ বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। চার-পাঁচ বছর আগে স্থানীয় কৃষক আফসার উদ্দিন প্রথমে গ্রামে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেন। তার দেখাদেখি বর্তমানে কামারালী গ্রামের অনেক কৃষক এখন গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করছেন।

জেলার তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, গত বছর দেড় বিঘা পরিমাণ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লাভ হয় তার। তাই চলতি মৌসুমে আরো ১৫ শতক বাড়িয়ে দুই বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন তিনি।

কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, জমি চাষ, চারা রোপণ, সেচ ও সার-কীটনাশক প্রয়োগ করে দুই বিঘা জমিতে এবার তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হবে। আর গাছে এখন যে পরিমাণ ফলন দেখা যাচ্ছে, তাতে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে দুই বিঘায় কমপক্ষে সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হবে।

কৃষক রবিউল ইসলাম আরো জানান, এরই মধ্যে ক্ষেতের প্রায় ৬০ শতাংশ টমেটো বিক্রি করেছেন। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন। গত মৌসুমের এ সময় যে টমেটো পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৯০-১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তা এ বছর ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

সাতক্ষীরা জেলা কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রওশন আলী জানান, গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাজারে ব্যাপক চাহিদা। জেলায় যে পরিমাণ উৎপাদন হয় তার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। তিনি বলেন, শীত মৌসুমে টমেটোর যে দাম পাওয়া যায়, তার দু-তিন গুণ বেশি দাম পাওয়া যায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর। তিনি বলেন, শীত মৌসুমে প্রতি কেজি টমেটো বাজারে বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা দরে, সেখানে গ্রীষ্মকালীন টমেটো বিক্রি হয় ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে। ফলে প্রায় তিন গুণ দাম বেশি থাকে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালীন টমেটো অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। কম সময়ে এত বেশি লাভ অন্য কোনো ফসল উৎপাদনে সম্ভব না।

তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে কৃষকের খরচ হয় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। সেখানে এক বিঘা জমির টমেটো বিক্রি হয় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। ফলে প্রতি মৌসুমে ফসলটির উৎপাদন বাড়ছে। জেলায় বারি-৪, ৮, ১০ ও ১১ জাতের উচ্চফলনশীল গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হচ্ছে বেশি।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: