ইচ্ছে মত শামুক সংগ্রহে ভারসাম্যহীনতায় ঝিনাইদহের পরিবেশ

আহমেদ নাসিম আনসারী, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের খাল-বিল-নদী-নালা-পুকুর-নদী থেকে ইচ্ছে মতো যখন-তখন শামুক সংগ্রহের কারণে ধীরেধীরে ঝিনাইদহের পরিবেশ ভরিসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। বাধাগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশের স্বাভাবিক খাদ্যতন্ত্র প্রক্রিয়া। একসময় শামুক শূন্য ঝিনাইদহ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ঝিনাইদহে প্রায় দুইশর’ও বেশী পরিবার শামুক সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। জেলার ছয়টি উপজেলাতেই কম-বেশী শামুক সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছে এমন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। তবে, শৈলকুপা উপজেলায় এ পেশার পরিবারের সংখ্যা বেশী। বিভিন্ন এলকায় গড়ে উঠেছে অনেক অস্থায়ী বাজার।

শামুক সংগ্রহের সাথে জড়িত ব্যবসায়ি ও সংগ্রহকারীরা জানান, এই এলাকায় বিভিন্ন অস্থায়ী বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৫০ হাজার টাকার শামুক ক্রয়-বিক্রয় হয়। যা দেশের বিভিন্ন জায়গার মাছের খামারে মৎস খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারের অস্থায়ী শামুক আড়তের ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন জানান, গাড়াগঞ্জ, ভাটই, চাঁদপুর ও বাগুটিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা শামুক সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে শামুক ক্রয় করে থাকি। যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি ঘের এলকা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনায় পাঠানো হয়। সেখানে এই শামুক মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সদর উপজেলার বেনিপুর গ্রামের শামুক সংগ্রহকারী শ্রী ভক্ত কুমার সরকার জানান, তিনি প্রতিদিন উপজেলার চড়িয়ার বিল, ভাটই, গাড়াগঞ্জ, বেনিপুর, কচুয়া, সাপখোলা, সারুটিয়া, নাগপাড়া ও বাগুটিয়াসহ বিভিন্ন জায়গার খাল-বিল, ডোবা নালা ও পকুর থেকে শামুক সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতি বস্তা শামুক ২৫০ টাকা থেকে ৩’শ টাকা বিক্রয় হয়ে থাকে। তিনি সারাদিনের ৩/৪ বস্তা শামুক সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু দিনের সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই শামুক সংগ্রহ করা যায়। কারণ তিনি জানান রোদ শুরু হলে শামুক পানির নিচেই চলে যায় তখন আর শামুক পাওয়া যায় না। তিনি আরো জানান, এই শামুক কুড়ানোর এই পেশাটি ৫/৬ বছর ধরে এই এলাকায় চলছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল, ডোবা নালা ও পকুর থেকে শামুক সংগ্রহ করা হয়। শামুক সংগ্রহকরা সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। পরে স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ীরা তা চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠায়।

এই বিষয়ে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, শামুক সংগ্রহে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু অতিরিক্ত শামুক সংগ্রহে পরিবেশের ক্ষতি হয় । এতে করে প্রাণীক’লের খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। অতিরিক্ত শামুক উত্তোলনের ফলে এক সময় পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: