রপ্তানিতে গতি আসছে

নিউজ ডেস্কঃ

দেশে রফতানি আয়ের পালে হাওয়া লেগেছে। চলতি অর্থ বছরের (২০১৭-১৮ ) প্রথম দু’মাসেই (জুলাই-আগস্ট) রফতানি আয় বেড়েছে। এ সময় ৬১৪ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৬৬২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।

বিগত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয় ছিল ৫৮২ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ফলে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় বেড়েছে ৪৮.৮৬ কোটি ডলার।

গতকাল রোববার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। যা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিগত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) মোট রফতানি আয় হয়েছিল তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬৬২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। চলতি অর্থবছরে প্রথম দু’মাসে (জুলাই-আগস্ট) এ খাতে আয় হয়েছে ৫৫২ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে আয় ছিল ৪৮৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে পোশাক খাতে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

গত দুই মাসে তৈরি পোশাক খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ সময়ে ২৬৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক এবং ২৮৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের নিট পোশাক রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় নিট পোশাকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। পাশাপাশি নিট ও ওভেন পোশাক রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৪ ও ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা হারিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স পরিদর্শনের পর কিছু কারখানা আংশিক, সাময়িক ও পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণ ও বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে অনেকের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কঠিন সঙ্কটের মুখে আছে পোশাক শিল্প। এরপরও পোশাক রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু আমরা দুশ্চিন্তায় আছি সামনের দিনগুলো নিয়ে।

বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, পোশাক তৈরির উপকরণ বোঝাই জাহাজগুলো থেকে পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পণ্য খালাস করতে না পারায় কন্টেইনার ভাড়া বাবদ বন্দর ও জাহাজ কোম্পানিকে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, টানা আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে বন্দরে জাহাজজট চলমান থাকার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে জাহাজীকরণ জটিলতা। রফতানি কন্টেইনার না নিয়েই জাহাজ বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। যা এর আগে কখনই ঘটেনি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিদেশি ক্রেতারাও সময় মতো পোশাক পাবে না।

ইপিবির তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মাছ রফতানিতেও যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে মাত্র আট কোটি ৭০ লাখ ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। যা চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এ খাতে আয় ছিল ৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। সেই হিসাবে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এছাড়া গত দুই মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে নয় দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ খাতে আয় হয়েছে ২৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নয় দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।

এ সময়ে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। যদিও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। গত দুই মাসে এ খাতে মোট আয় হয়েছে এক কোটি ৬৭ লাখ ডলার।

এছাড়া গত জুলাই-আগস্ট মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি আয়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে গত অর্থ বছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ সময়ে মোট ১৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3