ইলিশের কেজি ৩০০ টাকা

নিউজ ডেস্কঃ

বরিশালে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। যে মাছ ৭ দিন আগেও হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, সোমবার সকাল থেকে তা ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়।
অন্যদিকে আধা কেজি আকৃতির ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। দুদিন ধরে হঠাৎ করেই বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে বেড়ে গেছে ইলিশের আমদানি। সাগর থেকে ট্রলার যোগে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এত বিপুল পরিমাণ ইলিশ নিয়ে আড়তদারও পড়েছেন বিপাকে। ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পানির দামেই বেচতে হচ্ছে মাছ।

সরেজমিনে সোমবার সকালে নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম ঘুরে চমকে উঠতে হয়। পুরো মোকাম জুড়েই ইলিশের ছড়াছড়ি। চলছে হাঁকডাক। অপরদিকে সাগর থেকে আসা একের পর এক ট্রলার ভিড়ছে মোকামে। ট্রলার থেকে ইলিশ খালাসে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন মৎস্য শ্রমিকরা। ইলিশের কারণে মোকামে পা রাখার জায়গা নেই। শ্রমিকরা দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না।

এদিকে দাম কমার খবরে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা লাইন দিয়ে এসেছেন চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ কিনতে। পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের এমন চিত্র দীর্ঘ দিন পরে বলে দাবি করেছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। ব্যাগ ভরে মাছ কিনছেন আগত বেশিরভাগ ক্রেতা।

পোর্ট রোডের আড়তদার তালুকদার এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. কবির হোসেন বলেন, গত তিন চার দিন ধরেই মোকামে ইলিশের আমদানি বেশি। বিশেষ করে শুক্রবার আমদানি ছিলো তুলনামূলক বেশি। তাই বিক্রিও হয়েছে পানির দরে।

রোববার এক কেজি’র ওপরে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে। যার প্রতি মন বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার টাকায়। এক দিন আগে গ্রেড আকৃতির এই ইলিশের মন ছিলো ৩৬ হাজার টাকার উপরে এবং খুচরা মূল্যে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।

এছাড়া এক কেজি আকৃতির ইলিশ খুচরা ৫০০ থেকে সাড়ে ৫৫০ টাকা এবং পাইকারি প্রতিমন ২২ হাজার টাকা, যা আগের দিনে প্রতি মন বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়। ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রামের প্রতিমন ১৮ হাজার এবং খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা। আগের দিনের মূল্য ছিলো প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা। প্রতি মন জাটকা প্রতি মন ১০ হাজার এবং খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২৫০ টাকা। এক দিন আগে যার প্রতি মন বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। সামনে ইলিশের মূল্য আরো কমবে বলে মনে করেন তিনি।

বরিশালের সর্ববৃহৎ ইলিশ মোকাম পোর্ট রোডের আড়তের ইজারাদার ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরব হোসেন টুটুল বলেন, ইলিশের আমদানি বেড়েছে কয়েকগুণ। শুক্রবার মোকামে সর্বোচ্চ তিন হাজার মোনের বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে। যা বর্তমান মৌসুমের সর্বোচ্চ। এ কারণে ইলিশের দামও অনেক কমে গেছে।

এই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ইলিশের আমদানি বাড়লেও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই। কারণ ইলিশের আমদানি বেশি হলেও ক্রেতার সংখ্যা কম। এমন পরিস্থিতি যে ফ্রিজিং করারও কোনো সুযোগ নেই। কেননা বাংলাদেশে ফ্রিজিং করা মাছের চাহিদা নেই। তার ওপর বিদেশে ইলিশ রফতানিতেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ফ্রিজিং করে তা রফতানি করা যেত। সেটা সম্ভব না হওয়ায় ইলিশ পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আমরা যারা লাভে টাকা নিয়ে নিয়ে ব্যবসা করছি তারা মাঠে মরার উপক্রম হয়েছে। বাধ্য হয়ে পানির দামে ইলিশ বিক্রি করায় পাওনা টাকাই পরিশোধ করতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে রফতানিতে দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবিও জানান এই মৎস্য ব্যবসায়ী।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তার মধ্যে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিলো। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে জেলেরা ১৭-১৮ দিন সামুদ্রে যেতে পারিনি। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ অনেক বড় হয়েছে।

তিনি বলেন, মধ্যে ইলিশ ধরার দুটি জো ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় দুটি জোতেই ইলিশ শিকার হয়নি। এখন যখন জেলেরা ইলিশ শিকার করতে যাচ্ছে সব ইলিশ এক সঙ্গে ধরা পড়ছে। তাই মোকামগুলোতে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। কমেছে সাগরের ইলিশের দামও। তবে নদীর ইলিশ এখন উঠতে শুরু করেনি। নদীর ইলিশের দামও বেশি। কিছুদিনের মধ্যে নদীর ইলিশের আমদানিও বেড়ে যাবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: