সম্ভাবনাময় নতুন দুয়ার ‘মুক্তা চাষ’

নিজস্ব প্রতিনিধি:
দেশে হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, নদী-নালা ছড়িয়ে আছে। রয়েছে অসংখ্য জলাশয়। জলাশয়ে আছে ঝিনুক। আর ঝিনুক থেকেই পাওয়া যাচ্ছে মহামূল্যবান মুক্তা। এ কারণে মুক্তা দেখাচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। মুক্তা চাষকে বাণিজ্যিকীকরণে ছয় বছর ধরে গবেষণা চালাচ্ছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) একদল উদ্যোমী বিজ্ঞানী। এরই মধ্যে তারা তাদের কাজে সাফল্য অর্জন করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, মুক্তা গবেষণা একটি দীর্ঘমেয়াদি, ধারাবাহিক ও জটিল কার্যক্রম। তবে মুক্তা চাষের জন্য নতুন ও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তা কৃষক-খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে, মুক্তা আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাইরে চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কানাডা, স্পেন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে ‘প্রণোদিত’ উপায়ে মুক্তা উৎপাদন এবং চাষ করা হচ্ছে। এতে চীন ও জাপান ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া মুক্তা চাষের অনুকূল হওয়ায় এদেশেও মুক্তা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তাচাষ উন্নয়ন বিষয়ক একটি গবেষণা প্রকল্প বিএফআরআই থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১০ সাল থেকে ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) মুক্তা গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে। গবেষণার মাধ্যমে এ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা ছোট আকারের মুক্তা উৎপাদনের পাশাপাশি ‘ইমেজ মুক্তা’ (চ্যাপ্টা আকৃতি) প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন।

‘ইমেজ মুক্তা’ সম্পর্কে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট মুক্তা বিজ্ঞানী ড. মোহসেনা বেগম তনু বলেন, ‘এটি এক ধরনের নকশা আকৃতির মুক্তা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মূল্যবান মুক্তার অলঙ্কার প্রচলন থাকলেও এ দেশে এটি একদম নতুন। ইমেজ মুক্তার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে— এটি উৎপাদন করতে মাত্র সাত থেকে আট মাস সময় লাগে, যেখানে গোলাকৃতির মুক্তা তৈরিতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে। চ্যাপ্টা মুক্তার উৎপাদন খরচও কম। পুকুরে মাছের সঙ্গেও চ্যাপ্টা মুক্তা চাষ করা যায়।’

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী অমূল্য রত্নরাজির ক্ষেত্রে হীরার পরই মুক্তার স্থান। তাই মুক্তা চাষ এনে দিতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সেই সঙ্গে ভাগ্য খুলে যেতে পারে হাজারো বেকার যুবক-যুবতীর। বিশেষ করে এতে গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। কারণ ঝিনুক অপারেশনে তারা অধিক পারদর্শী। বাংলাদেশে শীতকালের স্থায়িত্ব কম হওয়ায় এবং সারা বছরেই উষ্ণ আবহাওয়া বিদ্যমান থাকায় এ দেশ ঝিনুকের দৈহিক বৃদ্ধি ও মুক্তাচাষের অনুকূলে রয়েছে। এমনকি এ দেশের ঝিনুক থেকে সংগৃহীত মুক্তার ‘রং’ বিশ্ব-বাজারে অনন্য।

Pearl Culture4

গবেষণায় সফলতা কেমন— জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ড. অরুণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, প্রকল্পের অর্থায়নে গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক চিহ্নিত করার জন্য দেশব্যাপী জরিপ চালানো হয়। গবেষণার মাধ্যমে এখন একটি ঝিনুক থেকে সর্বোচ্চ ১২টি মুক্তা তৈরি করা যাচ্ছে। ছয় মাসে সর্বোচ্চ ৫ মি.মি. এবং গড়ে ৩ মি.মি. আকারে মুক্তা পাওয়া গেছে। বাণিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষের ক্ষেত্রে মুক্তার আকার আরও বড় করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে মত্স্য গবেষণা ইনস্টিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের আঁকার ছোট হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে বড় আকারের ঝিনুক আমদানি এবং কারিগরি সহযোগিতা গ্রহণের জন্য গত মার্চে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সেদেশ সফর করেন।

সে পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসে ভিয়েতনামের মুক্তা বিশেষজ্ঞ মি. ভিয়েত বিএফআরআই মুক্তা চাষ প্রকল্প সফর করে বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া মুক্তা উৎপাদনে খুবই উপযোগী। আগামী জুন-জুলাইয়ে বড় আকৃতির ঝিনুক ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করার জন্য ইনস্টিটিউট ও মন্ত্রণালয় থেকে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বড় আকৃতির ঝিনুক আমদানি করে দেশে চাষ করা হলে বড় আকৃতির মুক্তা তৈরি করা সম্ভব।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: