লাভজনক খরগোশ পালন পদ্ধতি ও আয়-ব্যয় (ভিডিও)

ফিচার ডেস্ক:
শান্ত প্রাণী খরগোশ। পালন করা যায় খুব সহজেই। বাড়ির পরিত্যক্ত স্থানেই গড়ে তোলা যায় খরগোশের খামার।

দুই পদ্ধতিতে খরগোশ পালন করা যায়। একটি খাঁচায়, অন্যটি খোলা স্থানে। খাঁচাপদ্ধতি সবচেয়ে ভালো। প্রথমে ২০টি খরগোশ নিয়ে শুরু করতে পারেন। ২০টি খরগোশের জন্য তিনটি কাঠের ফ্রেম বা খাঁচা তৈরি করতে হবে। কাঠ দিয়ে তৈরি করতে পারেন খাঁচা। ছাদ জিআই তারের নেট দিয়েও দেওয়া যায়। খাবার দেওয়া ও খরগোশ বের করার জন্য খোলা রাখতে হবে খাঁচার একটা অংশ।

খরগোশ পাবেন কোথায়:
কাঁটাবনের দি বার্ডস বিতানের বিক্রয়কর্মী বরুণ দাস জানান, ঢাকার কাঁটাবন, মিরপুর, কাপ্তান বাজারসহ বিভিন্ন পশু-পাখি ও অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকানে পাওয়া যায় খরগোশ। গাজীপুরের টঙ্গী মার্কেট, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা খরগোশ পালনের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে খরগোশ কিনতে পাওয়া যায়।

খাবারদাবার:
খরগোশ তৃণভোজী প্রাণী। খাবার হিসেবে দিতে পারেন ঘাস, লতাপাতা, শাকসবজি, খড়কুটো, গম, ভুসি, খৈল, গাজর, মুলা, মিষ্টি আলু। একটি পূর্ণবয়স্ক খরগোশ প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ গ্রাম খাবার খায়। দানাদার খাবারের একটি মিশ্রণ হলো গম বা ভুট্টা ভাঙা ৪৫ ভাগ, ভুসি ৩৫ ভাগ, খৈল ১৫ ভাগ এবং লবণ ৫ ভাগ। বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দানাদার খাবারও দেওয়া যেতে পারে। খরগোশ কেনার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে এক থেকে দুই সপ্তাহ আগ থেকে কী পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন একই সময়ে কমপক্ষে তিনবার খাবার দিতে হবে।

প্রজনন সময় ও বাচ্চার যত্ন:
খামার করার জন্য সবচেয়ে ভালো চার থেকে পাঁচ মাস বয়সী খরগোশ। বয়স ছয় মাস হলেই বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। একটি মাদি খরগোশ প্রতি মাসে সাধারণত দুই থেকে আটটি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। পাঁচ থেকে সাতটি মাদি খরগোশের জন্য খামারে একটি পুরুষ খরগোশ রাখতে হবে।

খাঁচায় মাদি ও পুরুষ আলাদা আলাদা রাখতে হবে। প্রজননের সময় বুঝে তাদের একসঙ্গে করে দিতে হবে। বাচ্চা প্রসবের আগে খরগোশ নিজেদের বুকের লোম ছিড়তে থাকে। বাচ্চা প্রসবের আগে প্রতিটির জন্য একটি করে কার্টন রাখতে হবে। তাতে তুলা বা নরম কিছু দিয়ে রাখতে হবে। বাচ্চাদের জন্য এক মাস পর্যন্ত কোনো খাবার দিতে হবে না। এ সময় মায়ের দুধই যথেষ্ট। এক মাস পর থেকে অল্প অল্প করে দানাদার খাবার দিতে হবে।

খরচাপাতি:
চার বা পাঁচ মাস বয়সী একটি খরগোশের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সে হিসেবে ২০টি খরগোশ কিনতে লাগবে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। পাঁচ থেকে ছয়টি খরগোশ রাখা যায় এমন কাঠের বাঙ্ বা খাঁচা তৈরি করতে লাগবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। তিনটি খাঁচা বানাতে মোট টাকা লাগবে সাত থেকে আট হাজার টাকা। খাবার, পানি রাখার বাক্স ও খাবারের পাত্র কিনতে খরচ হবে এক থেকে দেড় হাজার টাকা।

রোগবালাই:
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. রানা মিয়া জানান, নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে খরগোশ। যেমন- ঠাণ্ডাজনিত রোগ, ডায়রিয়া, চর্মরোগ। এসব ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি কার্যকর। রোগবালাই দূরে রাখার জন্য খামারের পরিবেশ ভালো রাখতে হবে। নিয়মিত খাঁচা পরিষ্কার করতে হবে। পচা-বাসি খাবার দেওয়া যাবে না। একটি খরগোশ অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। বাজারে সব রোগের প্রতিষেধক পাওয়া যায়। প্রয়োজনে জেলা বা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অথবা স্থানীয় ভেটেরিনারি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

বাজারজাত করবেন কিভাবে:
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার খরগোশ খামারি তরিকুল ইসলাম জানান, খরগোশের বাচ্চা বা পূর্ণবয়স্ক খরগোশের বাজারজাতকরণ বেশ সহজ। দেশের অনেক জেলা বা বিভাগীয় শহরে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা যায়। ব্যবসায়ীরা খামারে গিয়েও খরগোশ কিনে থাকেন। বাচ্চার বয়স এক থেকে দেড় মাস হলেই বিক্রির উপযোগী হয়। তবে চার থেকে ছয় মাস বয়সী বাচ্চার দাম বেশি পাওয়া যায়।

লাভের হিসাব:
প্রতিটি মাদি খরগোশ প্রতি মাসে বাচ্চা দিয়ে থাকে। এভাবে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। খামারে যদি পনেরোটি মা খরগোশ থাকে, তাহলে প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ থেকে ৮০টি বাচ্চা পাওয়া যাবে। গড়ে যদি সত্তরটি বাচ্চা জীবিত থাকে, তাহলে এক মাস বয়সী বাচ্চা বিক্রি করে দাম পাওয়া যাবে কম করে হলেও আট থেকে ৯ হাজার টাকা। দুই থেকে তিন মাস বয়সী বাচ্চা বিক্রি করলে দাম পাওয়া যাবে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। চার থেকে পাঁচ মাস বয়সী খরগোশ বিক্রি করলে দাম পাওয়া যাবে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বাচ্চা বড় করে বিক্রি করতে চাইলে অনুপাত অনুযায়ী বাক্সসহ অন্যান্য জিনিস কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে লাভের অঙ্ক থেকে তা বাদ দিতে হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: