বিদায়ের আগেই চির বিদায় নিল কাকুলী
জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
এবারের আমন ধান কেটে ধুমধাম করে বিয়ে বিদায়ের কথা ছিল কাকুলী আক্তারের (২৩)। কিন্তু তার আগেই বাড়ির পাশে পুরাতন কালভার্টের নিচে ইট আনতে গিয়ে মাটিচাপায় পৃথীবীর আলো থেকে চির বিদায় নিয়েছেন কাকুলী আক্তার। এসময় আরও দু’জনের মৃত্যু ও সাতজন আহত হয়েছেন।
কাকুলি আক্তার জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের মধ্য জয়েনপুর গ্রামের নুর আলম সিদ্দিকীর মেয়ে। তিনি গাইবান্ধা সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্রী। তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে তার বিয়ের হয়েছিল রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার দুধিয়াবাড়ী গ্রামের মুসফিকুর রহমানের (৩০) সঙ্গে। মুসফিকুর একটি ঔধষ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভ হিসেবে চাকুরি করেন।
কাকুলীর মা খায়রন নেছা মেয়ে হারানো শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গত তিন মাস আগেই মেয়ে কাকুলীর বিয়ে দিয়েছি। পরিবারে আর্থিক দৈনতার কারণে বিয়ে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা করা সম্ভাব হয়নি। কথা ছিল আমন মৌসুমের ধান কাটা মারাই শেষে ধুমধাম করে কাকুলির বিবাহ বিদায় দেব। কিন্তু এর আগেই পৃথীবীর আলো থেকে চির বিদায় নিয়ে পরপারে চলে গেলো কাকুলী’।
কাকুলীর বাবা নুর আলম ছিদ্দিকীও মেয়েকে হারিয়ে শোকে নিথর হয়েছেন। তিনি জানান, তিন বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে কাকুলি ছিল তৃতীয়। তার বিবাহ বিদায় দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বাড়িতেই থাকত কাকুলি। ছোট ভাই হাসান মাহমুদ সোহেল সোমবার সন্ধ্যার পরও বাড়ীতে না আসায় তাকে খুঁজতে বের হয় কাকুলি। পরে তাকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই নিখোঁজের জগতে চলে যায় কাকুলী।
এদিকে, মাটিচাপায় একই সময়ে কাকুলীসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলে শোকের মাতম ও আহাজারী। এসময় পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভাড়ী হয়ে উঠে। তাদেরকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিবেশিরা। নিহতদের দেখার জন্য বাড়িতে স্বজনদের ভিড় বেড়েই চলে। এমন মৃত্যুর ঘটনা যেন মানতে পারছেনা কেউ।
বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুল কাউয়ুম হুদা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আবদুস সাত্তার ও কাকুলী বেগমের লাশ দাফন করা হয়। এরআগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আবদুল কুদ্দুসের লাশ দাফন করা হয়।
অপরদিকে, ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট (এডিএম) মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যর তদন্ত টিম গঠন করেছে জেলা প্রশাসক। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষে নিহত প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে ও আহতদের আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকারের পক্ষে থেকে নিহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার ও আহতদের ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত: সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গাইবান্ধা-সাদুল্যাপুর সড়কের নংকেরশ্বর নামক এলাকায় নির্মাণাধীন কালভার্টের নিচ থেকে পুরাতন ইট আনতে গিয়ে মাটিচাপায় কাকুলী আক্তারসহ ৩ জন নিহত ও ৭ জন আহত হন। গুরুত্বর আহতদের মধ্যে আরফি মিয়া (১৫), সেলিনা বেগম (৪০) ও ফুল মিয়া (৫০) ও সোহেল (৩০) সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে আহত মিনারা বেগমকে (২৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।