প্রতিটি খামারীকে গাভী ও বাছুরের যত্নে তথ্য সম্বলিত লিফলেট দেওয়া প্রয়োজন

ডাঃ মোঃ ফারুক আহমেদঃ

গরুর জাত উন্নয়নে (দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশজুড়ে প্রতিটি  উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা পরিচালিত কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্টের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

দীর্ঘদিন থেকে এভাবে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম চালানোর পরও গরুর জাতের উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হয়নি। এর পেছনে অবশ্য বহুবিধ কারণ রয়েছে। যেমন- আবহাওয়া ও পরিবেশগত- অত্যধিক তাপমাত্রা, কৃষকদের সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাব, পুষ্টির অভাব, বাছুরের যত্ন ও ব্যবস্থাপনার অভাব,  কাঁচাঘাসের অভাব, ইনব্রিডিং, ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ইত্যাদি।

উল্লেখিত কারণগুলোর মধ্যে আমার মতে গরুর জাত উন্নয়নে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বাছুরের যত্নের অভাব ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য না খাওয়ানো। এর পিছনে অনেকাংশেই দায়ী হলো কৃষকদের সচেতনতা ও আধুনিক জ্ঞানের অভাব।

দেশের অধিকাংশ কৃষক বা খামারী বা গরুর মালিকই জানে না গাভী ও বাছুরের যত্ন এবং তাদের সুষম খাদ্য সম্পর্কে।অধিকাংশ কৃষকই জানেনা একটি বাছুরকে কতটুকু দুধ খাওয়াতে হবে, কতটুকু কাঁচাঘাস ও দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।

এপ্রসঙ্গে তাদের বোঝানো যেতে পারে যে, বাছুরের জাতের উন্নয়নের জন্য বা তার জেনেটিক মেরিট বৃদ্ধির জন্য বাছুরকে ১-৪ মাস বয়স পর্যন্ত  তার ওজনের ১০% দুধ খাওয়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচাঘাস ও দানাদার খাদ্য দিতে হবে। তাহলে  সংকর জাতের বাছুরটি ১-১.৫ বছর বয়সে গরম হবে। এরপর এটি প্রতিবছরে একটি করে বাচ্চা দিবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনেক কৃষক বা খামারী না জানার কারণে কাঙ্খিত ফল পাচ্ছে না।

এজন্য প্রতিটি কৃষক বা খামারীকে কৃত্রিম প্রজননেরর সময় গাভী ও বাছুরের যত্নে তথ্য সম্বলিত একটি করে লিফলেট দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। যারা গাভী বা বকনাকে কৃত্রিম প্রজনন করায় তারা অবশ্যই সচেতন। তাদেরকে এধরণের লিফলেট দিলে এদের অধিকাংশই নির্দেশনা অনুসারে বাছুরকে দুধ ও খাদ্য খাওয়াবে বা খাওয়ানোর চেষ্টা করবে। যেহেতু লিফলেটটি শুধুমাত্র যারা গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করাবে তাদের দেওয়া হবে তাই উদ্যোগটি সহজ, কার্যকর ও ফলপ্রসু হবে। অর্থাৎ বাছুরগুলো উন্নতজাতের হবে, আকারে বড় হবে, বকনাগুলো যখন গাভী হবে বেশী করে দুধ দিবে এবং মাংসের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।  প্রাণিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়ন তরান্বিত হবে। ফলশ্রুতিতে দেশের আমিষ ও দুধের চাহিদা পূরণ হবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম হবে  সু্স্থ- সবল ও সুস্বাস্থ্যবান।

আমি নিজ উদ্যোগে লালমনিরহাট জেলার সবকটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ৫০-১০০ টি করে লিফেলট সরবরাহ করেছি এবং অনুরোধ করেছি যে পর্যন্ত না উদ্যোগটি কেন্দ্রীয়ভাবে চালু হয় ততদিন পর্যন্ত যারা কৃত্রিম প্রজনন বা সত্যায়িত করাতে আসা খা্মারীদের অনন্ত একটি করে লিফলেট দিয়ে সহযোগিতা করতে। অনেকেই হয়ত এতে সাড়া দিবে এবং উপকৃত হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কর্মরত সকল কর্মর্তাদের উদ্যোগটি চালু করার ব্যাপারে কার্যকরী ভুমিকা রাখবেন এই প্রত্যাশা সকলের। লিফলেটের একটি নমুনা কপি সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করবে আশা করি।

লেখকঃ
সহকারী পুলিশ সুপার (অপস্ এন্ড মিডিয়া)
৮ এপিবিএন
উখিয়া, কক্সবাজার

সাবেক ভেটেরিনারি সার্জন

  •  
  •  
  •  
  •