নিরাপদ উপায়ে চাষকৃত মাছ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে- বাকৃবি গবেষক

বাকৃবি প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশে নিরাপদ মাছ ও মুরগি উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গনে উৎপাদিত মাছের নিলামের আয়োজন করা হয়। ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিতভাবে এ নিলামের আয়োজন করে। প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত নিরাপদ মাছ ও মুরগির বাজারদর নির্ধারণ করার কৌশল হিসেবে গবেষক দল এ নিলামের আয়োজন করে।

গবেষকরা জানান নিরাপদ উপায়ে এসব চাষকৃত মাছ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে এবং চাষীরা তাদের উৎপাদিত মাছ আশানুরুপ মূল্যে বিক্রি করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমেরিকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রফেসর ড. মদন মোহন দে। তিনি বলেন, “মৎস্য ও মুরগির খাদ্যমান বজায় রেখে সঠিকভাবে পালন করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।” এরপর প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. মো: সাইদুর রহমান অনুষ্ঠানের মূলবিষয়বস্তু ও উপস্থিত ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে নিলামের নিময়াবলী তুলে ধরেন। তিনি বলেন,” এখানে প্রকল্পের অধীনে চাষ করা মাছের পাশাপাশি সরাসরি বাজার থেকে কেনা মাছ রাখা হয়েছে।” বাজারদর এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাষকৃত মাছের দাম নির্ধারণ করতে বলেন। এরপর ক্রেতাদেরকে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের দুইটি করে নমুনা দেখানো হয়। যার একটি বাজার থেকে কেনা ও অন্যটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় চাষ করা মাছ। নিলেমের প্রথম পর্বে মাছের আকার ও রং দেখে যে মাছটি ভালো মনে হয় ক্রেতাদের সেটির দাম নির্ধারণ করতে বলা হয়। এসময় ক্রেতারা নমুনা মাছগুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করেন ও সর্বোচ্চ দাম লিখে খামবদ্ধ করে জমা দেন।

দ্বিতীয় পর্বে মাছের গুণাগুণ বিষয়ে গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিশেষভাবে চাষকৃত মাছের মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের প্রফেসর ড. কে. এইচ. এম. নাজমুল হুসাইন নাজির উপস্থিত ক্রেতাদের সামনে গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্যগুলো তুলে ধরেন এবং ক্রেতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। গবেষণায় দেখা গেছে, নিরাপদ উপায়ে চাষকৃত মাছে জীবানুর উপস্থিতি একবারেই কম এবং কখনও কখনও অনুপস্থিত। অথচ অনিরাপদ উপায়ে চাষকৃত মাছে এসব জীবানুর পরিমান অনেক বেশী পাওয়া গেছে।

এরপর নিলামের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নিলামে যিনি সর্বোচ্চ দাম প্রস্তাব করেন তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এবং মাছটি কেনার জন্য তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামটি পরিশোধ করতে অনুরোধ জানানো হয়।

নিলামে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, আশেপাশের ব্যবসায়ীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সাধারণ ক্রেতাব। উপস্থিত ছিলেন গবেষণা দলের সদস্য প্রফেসর ড. মো: আখতারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী প্রফেসর ড. সামিনা লুৎফা এবং প্রায় অর্ধশতাধিক ক্রেতা সাধারণ। প্রথম পর্বে “ক” গ্রুপ থেকে প্রফেসর ড.মো: আবুল হাসেম বিশেষভাবে চাষকৃত তেলাপিয়া মাছ ২৫০ টাকা ও পাঙ্গাস মাছ ২০০ টাকা দাম প্রস্তাব করে বিজয়ী হন। তেলাপিয়া মাছ কেনার জন্য তাঁকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্য ২০০ টাকা ও পাঙ্গাস কেনার জন্য ১৫০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। পরবর্তী “খ” গ্রুপ থেকে তেলাপিয়া মাছের জন্য জনাব মোঃ মহসিন ও আসিফ মাহমুদ পাঙ্গাস মাছের জন্য আব্দুল হাকিম বিজয়ী হন এবং “গ” গ্রুপ থেকে আবু তাহের বিজয়ী হন। মহিলাদের গ্রুপ থেকে বিজয়ী হন জান্নাতুল নাইমা। ল্যাব টেস্টের রেজাল্ট জানার পর “ক” গ্রুপে বিজয়ী হন প্রফেসর ড. ছাদেকা হক। “খ” গ্রুপ থেকে আবদুল্লাহ শফিক মোঃ শহীদুল ইসলাম ও আসিফ মো হামজা তালুকদার এবং “গ” গ্রুপ থেকে আরিফুল ইসলাম বাবুল, আব্দুল কায়েম, জয়নাল আবেদিন যৌথভাবে বিজয়ী হন। মহিলাদের গ্রুপ থেকে বিজয়ী হন জান্নাতুল নাইমা ও শেফালী।

ফিড দ্যা ফিউচার ফুড সেফটি ইনোভেশন ল্যাবের অর্থায়নে এ প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মোঃ সাইদুর রহমান। এর মাধ্যমে জীবানু ও বিষমুক্ত মাছ চাষে খামারীদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। যা আমাদের নিরাপদ মাছ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবে বলেও জানান এই প্রকলের গবেষকগণ।

  •  
  •  
  •  
  •