বাকৃবিতে জলবায়ু বান্ধব কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পারমাণবিক পদ্ধতি ব্যাবহার করে ধান ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বাড়াতে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস ও অ্যামোনিয়া এর নিঃসরণ কমাতে জলবায়ু বান্ধব কৃষি (Climate Smart Agriculture) প্রযুক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ দিন ব্যাপী এই প্রশিক্ষণে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মায়ানমার, মঙ্গোলিয়া ও লাওস এর কৃষি বিজ্ঞানীগণ উপস্থিত ছিলেন।
১৪ জুলাই এই কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ বেনজীর আলম এবং সার্ক এগ্রিকালচারের পরিচালক ড মো: বখতিয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
আই এ ই এ (আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা) এর বিশেষজ্ঞ জার্মানির গিসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ক্রিস্টোফ মুলার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এছাড়া ড. ওয়াজিদ ইসহাক এবং ড. মোহাম্মদ জামান প্রশিক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের মূল ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো: মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর।
প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো: রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. আবুল হাশেম, আই এ ই এ এক্সপার্ট প্রফেসর ড. ক্রিস্টোফ মুলার, প্যারাসাইটলোজি বিভাগের প্রফেসর ড. সহিদুজ্জামান।
অনুষ্ঠান শেষে প্রফেসর ড. ক্রিস্টোফ মুলার ও প্রফেসর ড. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর সবুজবাংলাদেশ24.কমকে বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রদান করেন।
সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ক্রিস্টোফ মুলার বলেন, ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারের মাধ্যমে আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে পরিবেশের ক্ষতি সর্বনিম্ন রেখে ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব । এই প্রযুক্তিতে মাটিতে কার্বনের পরিমাণ বাড়ানোর মাধ্যমে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে টেকসই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায়।
পারমাণবিক প্রযুক্তি কিভাবে এই ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারে ব্যাবহার করা যাবে তার উত্তরে মুলার বলেন, অপরিবর্তনশীল আইসোটোপ ব্যাবহার করে গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের উৎস ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সূক্ষ্মভাবে জেনে সেই অনুযায়ী এদের উৎপাদন বন্ধের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব হবে।
এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কিভাবে উপকৃত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীরা তাদের নিজ নিজ দেশের সমস্যা সমাধানে কি কি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা পরস্পরের সাথে বিনিময়ের মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে সঠিক দিক নির্দেশনা পাবে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত এই প্রশিক্ষণে দেশ বিদেশের প্রশিক্ষনার্থীরা হাতে কলমে কৃষিক্ষেত্রে পারমানবিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে পারেন। যৌথ এই গবেষণা প্রকল্পের মাধমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগীয় গবেষণাগারে প্রযোজনীয় রাসায়নিক উপাদান ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে যা বাকৃবির শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে পারমানবিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে আরও সমৃদ্ধ করবে।