নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন আজ
মোঃ সাজ্জাদ হোসেন:
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করার জন্য যে সকল মহান ব্যক্তি, লড়াকু যোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেছেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অহিংসায় নয়, উদারতায় নয়, শক্তি প্রয়োগ করেই ব্রিটিশকে ভারত থেকে তাড়াতে হবে- এই মন্ত্রকে ধারণ করে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম চালিয়েছেন। সশস্ত্র বিপ্লববাদীদের সংগঠক হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যে কারণে বিপ্লবী যোদ্ধারা তাঁকে নেতাজী বলে সম্বোধন করতেন। ভারতের যুব সম্প্রদায়কে নেতাজী বলেছিলেন “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”।
আজ ২৩ জানুয়ারী উপমহাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনেরও অন্যতম নেতা বিপ্লবী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৭ সালে ২৩ জনুয়ারী উড়িষার কটক শহরে এক বাঙালি পরিবারে নেতাজির জন্ম হয়। তাঁর বাবা জানকিনাথ বসু একজন বিখ্যাত আইনজীবি ছিলেন। তাঁর ছাত্রজীবন শুরু হয় কটকের রভিন সাও কলেজিয়েট স্কুলে। কলকাতার স্কটিস চার্চ কলেজ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি কেমব্রিজ ইউনিভারসিটির ফিটজ উইলিয়াম কলেজ পড়াশোনা করেন। ১৯২০ সালে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এ-পরীক্ষা দেন এবং চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান দেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনার শুরু মূলত ১৯৩৬ সালের প্রথম ধিকে। তখন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর স্বদেশী আন্দোলন ভারতবর্ষের তরুনদের কাছে ছিল এক অনুপ্রেরনার নাম। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্বজীবনী বইয়ে লিখেছেন, “স্বাধীনতা আনতে হবে, আমিও সুভাষ বাবুর ভক্ত হয়ে গেলাম। আর স্বদেশী আন্দলনের লোকদের সাথে মেলামেশা করতে লাগলাম ”।
বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দোলার ভাবমূর্তিকে নস্যাৎ করতে লন্ডনের অখ্যাত হলওয়েল নামক ব্যক্তি “অন্ধকুপ হত্যা কাহিনী” রচনা করে। ১৯৩৯-৪০ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে তরুন নেতা শেখ মুজিব “হলওয়েল মনুমেন্ট” অপসারনের দাবি করে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৪০ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক মন্ত্রীসভা গঠনের পর “হলওয়েল মনুমেন্ট” অপসারন করে।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সকল ধরনের কুসংস্কারের বাইরে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “ধর্মের নামে, দেশের নামে বা রাজনীতির নামে কোনো প্রকার গোঁড়ামি যেন আমাদের শিক্ষা মন্দিরে প্রবেশ করিতে না পারে, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রাখা উচিত।” তিনি ছিলেন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার পক্ষপাতি। তাঁর মানসিকতা বোঝার জন্য আমরা পড়তে পারি এই কথাটুকু যেখানে তিনি লিখছেন, “ধর্মনিরপেক্ষ ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার আর একদিক দিয়া উপযোগিতা রহিয়াছে। ইহা অর্থনৈতিক চেতনা জাগ্রত করিতে সহায়তা করে। অর্থনৈতিক চেতনার প্রভাব গোঁড়ামির মৃত্যু ঘোষণা করে”।
ধারণা করা হয়, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ১৯৪৫ সালের ১৯ আগষ্ট টোকিও যাবার পথে, তাইওয়ানে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তবে তার মৃত্যুর সঠিক তারিখ ও স্থান সম্পর্কে এখনো বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। তাঁর দেহাবশেষ কোনোদিনও উদ্ধার করা যায়নি।
_________________________________________
লেখক:
মোঃ সাজ্জাদ হোসেন
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
Email: shohag.ahvs.ru@gmail.com
You must be logged in to post a comment.