বাবার নামে লেখা সাবরীনার চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক-
বাবারা শব্দে নয়, দায়িত্বে কথা বলেন। তাঁরা মমতার ভাষা বলেন না, কিন্তু জীবনভর আমাদের পাশে থেকে তা অনুবাদ করে দেন। একটা ছায়া, যে রোদ এলে এগিয়ে আসে, ঝড় এলে আরও কাছে আসে—সেই ছায়ার নাম বাবা।
এই বাবাদেরকেই কখনো মুখ ফুটে “ভালোবাসি” বলা হয় না। হয়তো তার কারণ লজ্জা বা সংকোচ। কারণ, আমাদের বাবারা আমাদের মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়া হন ঠিকই, কিন্তু নানা কারণে “ভালোবাসি” বলতে পারার মতো সহজ আমরা হতে পারি না। আবার, আমাদের বাবাদেরকেও দেখিনি দাদাদের “ভালোবাসি” বলতে। কিন্তু তাই বলে কি কোনোদিন বাবাদের বলা হবে না—“বাবা, আপনাকে অনেক ভালোবাসি”?
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগ যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি সহজ করেছে বাবাদেরকে “ভালোবাসি” বলা। আজ বিশ্ব বাবা দিবসে নিজের বাবাকে বলতে না পারা কথাগুলো জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাবরীনা আক্তার।
না বলা ভালোবাসার মধ্যে বাবা নামটাই প্রথমে আসে। দুনিয়ার অদেখা ভালোবাসার মধ্যে বাবারা যেন সবচেয়ে উপরে। আপনাকে কখনো বলা হয়ে ওঠেনি—“অনেক ভালোবাসি আব্বু আপনাকে।” পরিচিত কেউ যখন বলে—“আরে, তোমার আব্বু তো খুবই ভালো মানুষ”—তখন যেন বাবার প্রতি ভালোবাসাটা আরও বেড়ে যায়।
২০১৮ সালে যখন বাবার হার্ট অ্যাটাক হয় এবং ওপেন হার্ট সার্জারির অনেক দিন পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, আর আমাকে আবারও আগের মতো “বাবু” বলে ডাকেন, তখন কেন জানি চোখ দিয়ে অজানা কারণেই পানি পড়ছিল। বাবাকে যে অনেক ভালোবাসি—এই কথাটা সেদিনও বলতে পারিনি।
মেয়েরা তাঁদের বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, কারণ বাবা তাঁর মেয়েকে ‘মা’ বলে ডাকে। যেদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে চলে আসলাম, সেদিন আমার বাবা সে কী কান্না! বাবা রীতিমতো বলছিলেন—“এই যে আমার ঘর খালি হলো। এই ঘর তো আর পূরণ হবে না।”
ছোটবেলার খুবই সাধারণ একটা স্মৃতি সব সময় বাবার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়—এসএসসি পরীক্ষার সময় যখন রাত জেগে পড়তাম, তখন বাবা সব সময় সাহস জোগাতেন। বলতেন, “পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না।” এবং ঠিক তাইই হয়েছে। আমি আশানুরূপ ফল পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি।
আরেকটা ছোট্ট ব্যাপার মনে পড়ে যায়—আমার প্রিয় খাবার যখন বারবার আনতেন, আর আমি বলতাম, “আবারও কেন আব্বু?” বাবা বলতেন, “আমার বাবুর পছন্দ তাই।” এই ছোট ছোট ভালোবাসাই আমার কাছে অনেক বড় কিছু।
বাইরে যখন কোনো বাবা-মেয়ের খুনসুটি দেখি, তখন ঠিক আমার বাবার কথা মনে পড়ে, চোখ দিয়ে অঝোরে পানি চলে আসে। বাবার প্রতি ভালোবাসা মনে হয় এমনই হয়। জীবনের কিছু কঠিন কঠিন সময়েও বাবাই সাহস ও উদ্দীপনা জাগিয়েছিলেন। এখনো যখন বাড়িতে এসে পছন্দের খাবারটা সামনে পাই, তখনও ঠিক বাবার কথাই মনে পড়ে।
আমার বাবাকে কখনো চিঠি লেখা হয়নি। “ভালোবাসি”-এটাও বলা হয়নি। তবে আজ বলতে চাই-
“ শ্রদ্ধেয় আব্বু,
প্রথমেই আপনাকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। ‘বাবা’ শব্দটা যত না সহজ, সাবলীল, তার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধার, দায়িত্বের আর কর্তব্য পালনের। জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার বাবা, আর সেটা আমার বাবা। জন্মের পর থেকে যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছি সেই মানুষটা আপনি। এত বড় হওয়ার পরেও যার ভালোবাসা কোনো দিন কমে যায়নি, সেই মানুষটিও আপনি। ছোট থেকে এ পর্যন্ত যত সফলতা পেয়েছি, সবকিছুই সম্ভব হয়েছে আপনার জন্য। সব কিছুর পেছনে রয়েছে আপনার অক্লান্ত পরিশ্রম, দায়িত্ববোধ আর আমাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা। আমি সব সময় চেষ্টা করব আপনার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে। আল্লাহ যেন আপনার সব ইচ্ছেপূরণ করতে আমাকে সক্ষমতা দান করেন। আল্লাহ যেন আপনাকে সব সময় সুস্থতা দান করেন এবং দীর্ঘজীবী করেন। আমি যেন আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে উঠতে পারি- এই দোয়া করছি।
আপনাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।
-আপনার বাবু।”
আশিক/এসবি