ভারতে আবারও জিকা সংক্রমণ, বাংলাদেশে ঝুঁকি কতটুকু?

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

ভারতে মহারাষ্ট্রে প্রথম জিকা ভাইরাসে সংক্রমণের খবর মিলল শনিবার। জানা গিয়েছে, পুণের পুরন্দর এলাকায় এক প্রৌঢ়ার দেহে এই ভাইরাস মিলেছে। তাঁর চিকুনগুনিয়াও ধরা পড়েছে।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রৌঢ়া সুস্থ আছেন। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের কোনও উপসর্গ ধরা পড়েনি। এমনকি আক্রান্ত ওই প্রৌঢ়ারও কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি

জিকা হল এক ধরনের ভাইরাল ইনফেকশন। যা ছড়িয়ে দেয় মশা। এডিস ইজিপ্টাই মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এই মশা ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া মতো রোগ‌ও ছড়ায়। তা ছাড়া জিকা ছড়ায় যৌনাচারের মাধ্যমে। মানে, কারওর যদি জিকা হয়, তিনি যৌনাচারের মাধ্যমে তাঁর পার্টনারের দেহে এই অসুখটির বীজ রোপণ করতে পারেন। উগান্ডায় ১৯৪৭ সালে বাঁদরদের মধ্যে প্রথম মেলে জিকার দেখা। মানুষের মধ্যে জিকা সংক্রমণ-সংবাদ পাওয়া যায় তার পাঁচ বছর পর।

১৯৬০ সালের পর থেকে সারা পৃথিবীতে বিক্ষিপ্ত ভাবে জিকা সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম জিকা মহামারির আকার নেয় প্রশান্ত মহাসাগরের ইয়াপ দ্বীপে। ২০০৭ সালে। ‌ এর পর ২০১৫ সালে জিকা মহামারি হয় ব্রাজিলে। তখন মাইক্রোসেফালি (Microcephaly) বলে আরেকটা অসুখের সঙ্গে জিকার অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক সামনে এসে যায়। মাইক্রোসেফালিতে ছোট মস্তিষ্ক নিয়ে শিশুর জন্ম হয়, তার ব্রেন অপরিণত অবস্থায় থাকে।

জিকা কতটা মারাত্মক?

কোন‌ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জিকা হলে তা মারাত্মক, কারণ তাহলে গর্ভস্থ শিশুটির মাইক্রোসেফালি হতে পারে। গর্ভবতী মহিলা ছাড়া জিকা অন্যান্যদের ক্ষেত্রে তেমন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে না। তবে ব্রাজিলে জিকা মহামারির সময় দেখা যায় গিলান-বারে সিনড্রোম ( Guillain-Barré syndrome) জিকা বাড়িয়ে তুলছে। গিলান-বারে সিনড্রোমের ফলে প্যারালাইসিস হতে পারে। যা ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। ১৯১৬ সালে গিলান ও বারে নামে দুই নিউরোলজিস্ট এই অসুখটিকে চিহ্নিত করেন বলে ওই দুই চিকিৎসকের নামে এটির নামকরণ।

২০১৭ সালে ব্রাজিলে জিকা সংক্রমিত মধ্যে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা যায় এই অসুখে মৃত্যুর হার ৮.৩ শতাংশ। গবেষণাটি করে ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ। তবে সব ক্ষেত্রে এমনটা না-ও হতে পারে।

জিকা সংক্রমণের উপসর্গগুলি কী?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিকা হলে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য উপসর্গের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ফ্লু বা‌ জ্বরের উপসর্গের মতোই যা। মানে আপনার জিকা হলে জ্বর কিংবা মাথাব্যথা হতে পারে। কোনও ক্ষেত্রে Rash বেরোতে পারে। যেমন ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে হয়। আবার কার‌ওর হতে পারে কনজাংটিভাইটিস। পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে উঠলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। জিকা সংক্রমণ হলে উপসর্গ আসতে (যাকে ইনকিউবেশন পিরিওড বলা হয়ে থাকে) ৩ থেকে ১৪ দিন লাগতে পারে।

জিকার চিকিৎসা কী?

জিকার কোন‌ও ভ্যাকসিন নেই কিংবা কোনও ওষুধ নেই। উপসর্গ সাধারণত মৃদু। বেশি পরিমাণে জল খাওয়ার প্রয়োজন জিকা হলে। এবং গা-ব্যথা আর জ্বরের জন্য দরকার বিশ্রাম। এমনই বলছে হু।

বাংলাদেশে সংক্রমনের আশঙ্কা রয়েছে কি?

সিঙ্গাপুর কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। কারণ এখানের গড় তাপমাত্রা অনেক বেশি এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ এমন যা জিকা ভাইরাস বহনকারী দুই ধরনের এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক। এছাড়া বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিভিন্ন কারণে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে প্রচুর লোক আসেন।

বাংলাদেশের জনগণ কর্মসংস্থান ও অন্যান্য কারণে আক্রান্ত দেশগুলোয় আছেন অথবা ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশে ঘনবসতির কারণে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও অনেক বেশি।

 

  •  
  •  
  •  
  •