উচ্চ ফলনশীল আধুনিক জাতের ধান ব্রি ধান-৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে ব্রিধান-৬৩ বা সরু বালাম এবং ব্রি ধান-৫৮ নামে নতুন উচ্চফলনশীল দুইটি আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। ধানে পাক ধরেছে এবং আগামী সপ্তাহে তা কর্তন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামের পাশে কার্তিকডাঙ্গা বিলে চাষকৃত এ দুটি জাতের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট ধান চাষ উদ্যোক্তা ও কৃষক। পরীক্ষা নিরীক্ষার বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সী জাত দুটি সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে চাষের অনুমোদন দিয়েছে।
ব্রি ধান-৬৩ এর বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে; এ জাতের ধান থেকে বোরো মৌসুমে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির(উচ্চমানের) চাল পাওয়া যাবে যা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। এ জাতটির চাল সরু এবং গুণাগুন বালাম চালের মতো বলে জাতটি সরু বালাম নামে পরিচিত। জাতটি অধিক ফলনশীল, চালের আকার আকৃতি পাকিস্তানী বাসমতির মত লম্বা ও চিকন। চালে অ্যমাইলোজের পরিমাণ ২৫.০%, প্রোটিনের পরিমাণ ৮.২%, ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২২.১ গ্রাম। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া ও লম্বা তাই এ ধান দেখতে খুব আকর্ষণীয় হয় এবং ধান পাকলেও দূর থেকে দেখলে মনে হয় ধান ক্ষেত সবুজ । এছাড়া ব্রিধান-৫৮ উচ্চ ফলনশীল, চাল মাঝারী লম্বা, ভাত ঝরঝরে। এ জাত দুটির হেক্টরপ্রতি ফলন ৭টন থেকে সাড়ে ৭টন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান তমাল লতা আদিত্য এ ধানের ব্যাপারে বিশেষভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য জাত ২টি উত্তম জাত এবং এর মধ্যে ব্রি-ধান-৬৩ বা সরু বালাম বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। এ ধানটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শীর্ষ থেকে ধান ঝরে পড়ে না। চালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো রান্নার পর ভাত লম্বায় বাড়ে। এ ধানটি ব্রি ধান২৮ এর মত একই পরিচর্যায় করা যাবে। এই ধান চাষ করে কৃষক অধিক লাভবান হবে। এ জাতের ধানের গড় জীবনকাল ১৪৮-১৫০ দিন এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টরে ৬.৫-৭.০ টন ফলন দিতে সক্ষম। এছাড়াও ব্রি ধান৬৩তে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামের পাশে কার্তিকডাঙ্গা বিলে ২০১০সালে যে জমিতে প্রথম ব্রি ধান-৫০ (বাংলামতি) লাগিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয় সে ক্ষেতেই লাগানো হয়েছে এই নতুন জাত দুটি। এ নতুন ধানের জাত দুটি চাষেরও উদ্যোক্তা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান। তিনি ব্রি থেকে নতুন ধানের এ জাত দুটির প্রত্যেকটির ৫ কেজি করে বীজ সংগ্রহ করে নিজেদের ৬০শতাংশ জমিতে লাগানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন ব্রিধান-৬৩ সরু বালাম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে এবং আগামী ৫-৬বছরের মধ্যে মিনিকেট এবং ব্রি-ধান ২৮জাতের চালের বাজার দখল করবে । আর ব্রিধান-৫৮ মাঝারী চিকন এবং এর ফলন ভালো। ভাত ঝরঝরে হওয়ায় তা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নধ্যবিত্তের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে। জাত দুটি মাঠে চাষকারী কৃষক টিপনা গ্রামের আকতার হোসেন বলেন, নতুন জাতের এ ধান দুটোর ভালো ফলন দেখে আশপাশের গ্রাম থেকে প্রতিদিনই লোক আসছে দেখতে। যে জমিতে এ ধান চাষ করা হয়েছে ২০১০সালে এখানে বাংলামতি ধানের চাষ হয়েছিলো।
এর পর আর কোনো ধানে এতো ফলন হয়নি। তিনি বলেন যখন চারা বীজতলায় ছিলো তখনই বুঝতে পারি এই ধান ভালো হবে। যখন থোড় আসে তখন গাছ বেশ মোটা হয় এবং কলার মোচার মতো সরু বালামের ধানের শীষ তেমনিভাবে বের হয়ে আসতে দেখে অবাক হই। পাতা উপরে, ধান নীচে এবং ধানের শীষে বেশ লম্বা লম্বা ধান। দূর থেকে বোঝাই যায় না এ ক্ষেতে ধান আছে। আর ব্রিধান-৫৮ তো সোনার মতো রং। ধানের শীষ সোজা উপরের দিক বের হলো আর খেত সোনার মতো রং হলো। অনেকই এখন এ ধানের ব্যাপারে আগ্রহী,অনেকে দেখতে আসছে এবং তারা বীজ নিতে চাচ্ছে। আমরাও ঠিক করেছি বীজ করে এই নতুন ধানের আবাদ ছড়িয়ে দেবো যাতে দ্রুত চাষ বাড়ে । একটি বীজ কোম্পানী ক্ষেতের সবধান কিনে বীজ বানাতে আগ্রহী,তবে আমরা বীজ এবছর অল্প অল্প করে বেশি সংখ্যার আগ্রহী চাষীদের দেয়ার চেষ্টা করবো।