একাত্তর জার্নালের আলোচনায় বাকৃবি গবেষকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেগুনে উচ্চমাত্রার ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বিভ্রান্তিমূলক শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশের পর মূল ধারার গণমাধ্যম টিভি চ্যানেলে এই নিয়ে বিতর্কিত টক–শো প্রচারিত হয়, যা জন্ম দিয়েছে ব্যাপক সমালোচনার।বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যম চ্যানেল একাত্তর টিভি তে এই টকশোটি প্রচারিত হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনের প্রকাশিত প্রবন্ধ নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা ও টকশো বিতর্কে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন বাকৃবি সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনের প্রকাশিত জার্নাল Human health implications of trace metal contamination in topsoils and brinjal fruits harvested from a famous brinjal‑producing area in Bangladesh; টি ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে, “বেগুনে ক্যান্সারের উপাদান পাওয়া গেছে” শিরোনামে ১৮ অক্টোবর দৈনিক জনকণ্ঠ খবর প্রকাশ করেছিল। বাংলা ট্রিবিউনে এই খবর আসে সপ্তাহ দুয়েক পর। এরপর একাত্তর চ্যানেলে এই নিয়ে করা হয় টকশো।
সেখানে আলোচক হিসেবে প্রধান গবেষক ড. জাকির হোসেন সহ সংবাদকর্মী উদিসা ইসলাম, মাসুদা ভাট্টি ও ফারজানা মিথিলা।
গরম ও শীত মৌসুমে দেশে উৎপাদিত দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে বেগুন। দেশে প্রতিদিন একজন মানুষ ৭.২৮ গ্রাম বেগুন খেয়ে থাকেন। আর তাই সবজি হিসেবে বেগুনকে গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়।
বাকৃবির বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রে বলা আছে, ৬০টি টপসয়েল ও ৮০টি বেগুনের নমুনা নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। তাহলে এই গবেষণা স্পষ্টতই সারাদেশে উৎপাদিত বেগুনের জন্য নয়। এমনকি জামালপুর অঞ্চলের সব বেগুন ক্ষেতের চিত্রও এটি নয়।
টকশোতে “ক্যান্সারের জীবাণু বা জার্ম”, “গবেষণায় বেগুন নেওয়া হলে ঝিংগা কেন নয়?” এর মত অদ্ভুত এই শব্দগুলো আলোচনাটিকে ক্রমশই ভিত্তিহীন করে তুলেছিল বলে মন্তব্য করেন সমালোচকরা। বিজ্ঞান ও গবেষণার সামান্য জ্ঞান না থাকার কারনেই এসব উদ্ভট প্রশ্ন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
একজন অধ্যাপক কে স্যার বলে সম্বোধন তো দূরের কথা আক্রমানত্বক ভাবে জেরা করা এবং রীতিমতো অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দার ঝর উঠেছে। গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম, বাকৃবি নীল দল, ছাত্র ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবাদ জানিয়েছে।
টকশোতে একাত্তর টিভির উপস্থাপিকা ফারজানা মিথিলা বলেন, “এসব গবেষণা প্রচার(পাবলিক) করতে হবে কেন?” এমন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের জবাব সমালোচকরা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছেন। কথা উঠেছে একাত্তর জার্নালের টকশোর মান নিয়েও।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারাসাইটোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ সহিদুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, একটি গবেষণা তার স্বীকৃতি পায় প্রবন্ধে প্রকাশের মাধ্যমে আর তা প্রকাশিত হলে সেটা সবার কাছে উম্মুক্ত হবে এটাই নিয়ম। কারণ জনসচেতনতা বৃদ্ধি বা গবেষণার ফলাফল জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়াই গবেষণার মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশে শুধু সবজি নয়,ইতোমধ্যে মাছ , মাটি ও পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন সবুজ বাংলাদেশ24.কম-কে বলেন, টকশোতে তাঁর সাথে এ ধরনের আচরণ করা হবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।
বাংলাদেশ সরকার যেখানে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে গবেষণা অনুদান দিচ্ছে সেখানে জনস্বার্থে গবেষণা করা গবেষককে ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়টিকে আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান গবেষকরা।
সমালোচকদের অনেকেই মনে করেন এই টকশোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ভিন্ন কোনো গবেষক অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে জরিত কোনো ব্যক্তিবর্গকে অতিথি হিসেবে রাখা উচিত ছিল। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল বা সমালোচনাগুলো পড়ে সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলছেন অনেকেই।