৬৭ শতাংশ মানুষ গরম ও অস্বস্তিতে মাস্ক পরেন না

নিউজ ডেস্কঃ

মাস্ক ব্যবহার করলে করোনার ঝুঁকি কমে, এমন মত এসেছে ৯২ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে ৬৭ দশমিক ৪০ শতাংশ মত হলো, গরম ও অস্বস্তি লাগায় বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরেন না। আবার ৯০ শতাংশের বেশি জানেন, ঝুঁকি কমাতে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া উচিত। কিন্তু প্রয়োজনের সময় সাবান-পানি না পাওয়ায় হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হচ্ছে।

গত ৩১ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত ‘করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ শীর্ষক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। ব্র্যাক, লাইফবয় ও প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত অনলাইন জরিপে ৩ লাখ ২০ হাজার ৭৮১ মত আসে। জরিপটি ৩০ লক্ষাধিক পাঠকের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এক ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন।

জরিপে করোনা মহামারিতে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলা ও নিয়ম পালনে কী কী বাধা বা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, এ সম্পর্কিত ১০টি প্রশ্ন করা হয়। জরিপটি অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে পরিচালিত। এতে একই অংশগ্রহণকারী একাধিকবার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকতে পারেন। আবার একজন অংশগ্রহণকারী সব কটি প্রশ্নের উত্তর না–ও দিয়ে থাকতে পারেন।

জরিপের ফলাফল বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষ জানে, কিন্তু কেউ মানছে, কেউ মানছে না। দেশে এখন করোনা সংক্রমণের যে হার, সেটি কমাতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ করোনার সংক্রমণ রোধে কিছু কিছু কাজ হচ্ছে, এই কাজগুলোকে ব্যাপকতা দিতে হবে।

বাইরে চলাচলের সময় অনেকেই কেন মাস্ক পরছেন না। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ৬৭ দশমিক ৪০ শতাংশ মত হলো , মাস্ক পরলে গরম ও অস্বস্তি লাগে। ২০ দশমিক ৯০ শতাংশ মত, মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ মত, সব ক্ষেত্রে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কী করলে সবাই বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরতে উৎসাহিত হবেন। উত্তরদাতাদের ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ মত, বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, এটি মনে করিয়ে দিতে হবে। ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ মত, মাস্ক ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে। আর ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ মত এসেছে যে, মাস্ক না পরলে কী ক্ষতি হতে পারে তা জানাতে হবে।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, অস্বস্তির কারণে অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। বাজারে বেশির ভাগ মাস্ক সিনথেটিক কাপড়ের। সুতি কাপড়ে তৈরি মাস্ক অনেক বেশি আরামদায়ক ও নিরাপদ। সুতি মাস্ক ধুয়ে একাধিকবার ব্যবহারও করা যায়। সুতি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে উৎসাহী করতে হবে। পরিবারের সদস্যরা বাইরে মাস্ক ব্যবহার না করলে পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরা ঝুঁকিতে পরবেন, সেটি বোঝাতে হবে।

করোনার সংক্রমণ রোধে নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান–পানি নিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। জরিপে অংশ নেওয়া ৭২ দশমিক ৬০ শতাংশ মত হলো, নিয়মিত হাত ধোয়া করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ মত, হাত ধোয়া উপকারী। আর কিছুটা উপকারী বলে মত এসেছে ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, দিনে কতবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়েছেন। ৩৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বলেন, তাঁরা দিনে ৩ থেকে ৫ বার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়েছেন। ৬ থেকে ৯ বার হাত ধুয়েছেন ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ; আর দিনে ১০ বারের বেশি হাত ধুয়েছেন ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, প্রয়োজনের সময় সাবান-পানি পাওয়া না যাওয়ায় হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয়। ৪৪ দশমিক ৯০ শতাংশ মত এসেছে এমনটাই। আর ৩৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বলছেন, নিয়মিত হাত ধোয়ার বিষয়টি তাঁদের মনে থাকে না। তবে ঝুঁকি কমাতে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া উচিত, এমনটা মনে করেন ৯০ দশমিক ১০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

অন্যদের নিয়ম না মানাকে কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা মনে করেন ৬১ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ বলছেন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো যথেষ্ট জায়গা পাওয়া যায় না। আর ৬ দশমিক ১০ শতাংশ মত, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি তাঁদের মনে থাকে না।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সামাজিক সম্পৃক্ততার খবর গণমাধ্যমে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে হবে। অনেক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাত ধোয়ার সাবান ও পানি নেই। ওয়াশিং স্টেশন বা হাত ধোয়ার জায়গা খুব জরুরি।

সুত্র: প্রথম আলো

  •  
  •  
  •  
  •  

Tags: