পশু চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ড. সালমা সুলতানা

নিউজ ডেস্কঃ

সম্প্রতি পশু চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সালমা সুলতানা। বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় এশিয়ার শত বিজ্ঞানীর তালিকায় যে তিনজন বাংলাদেশি নারী জায়গা করে নিয়েছেন তাদের একজন তিনি। পশু চিকিৎসার শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এশিয়ান সায়েন্টিস্টে ১০০ জন বিজ্ঞানীর এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

সালমা সুলতানা একজন কৃষিবিদ (ভেটেরিনারিয়ান)। মূলত তিনি খামারি ও ক্ষুদ্র কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন এবং পশুর রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরিসহ একটি ভেটেরিনারি হাসপাতালও গড়ে তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় তিনি দেখতে পান যে দেশে পশু চিকিৎসায় একটা শূন্যতা রয়েছে এবং সে কারণেই তিনি এবিষয়ে কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহী হন।

সালমা সুলতানা এর কর্মজীবন শুরু হয় পটিয়ায় ডেইরি ভেটেরিনারি ফাউন্ডেশনে একজন ভেটেরিনারি অফিসার হিসেবে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর কাজ করেন। পরে ঢাকায় গিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি প্রাণিচিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘মডেল লাইভস্টক ইনস্টিটিউট’। এটি দেশের প্রথম বেসরকারী প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্র। এখান থেকে খামারীরা এবং কৃষকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারবে। বাবার জমানো টাকা দিয়েই তিনি তার এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, তিনি যখন পটিয়ায় কাজ করছিলেন তখন কৃষকদের দুরবস্থা নিজ চোখে দেখতে পেয়েছিলেন। সেখানে দেখেছিলেন কেউই তেমন প্রশিক্ষিত না। ফলে খামারীরা লাভবান হতে পারছিলেন না। এই কারণেই তিনি এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ঢাকার ডেমরায় জমি ইজারা নিয়ে ২৭ বছর বয়সে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বেসরকারী একটি প্রাণীচিকিৎসার একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়ার পর তিনি গড়ে তোলেন মডেল লাইভস্টোক এডভান্সড ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা খামার পরিদর্শন করেন এবং খামারীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন।

সালমা সুলতানা বলেন, আমাদের পশু চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় সহকারী বা ভেটেরিনারি নার্স নেই। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখি কেউ নেই যিনি আমাকে একটু সাহায্য করতে পারেন। ডাক্তাররা কিন্তু সবকিছু করতে পারে না। আমাদের ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তখন মনে হলো যে এখানে কাজের একটা বড় সুযোগ রয়ে গেছে।

সালমা সুলতানা কৃষিক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে অবদান রাখার জন্য ২০২০ সালে নরম্যান ই বোরলগ পুরস্কার লাভ করেন। যা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজের পক্ষ থেকে দেয়া হয়। তিনি ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও ফজলে হাসান আবেদের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া জয় বাংলা ইয়ুথ এওয়ার্ড, মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড ২০১৭, ইন্টারন্যাশনাল আর্চ অব ইউরোপ ফর কোয়ালিটি অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ লাভ করেন তিনি।

২০১০ সালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ওপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি তামিল নাডু ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে সিভাসু থেকে ২০১৪ সালে ফার্মাকোলজির ওপর স্নাকতোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

এশিয়ান সায়েন্টিস্টে আরও যে দুজন বাংলাদেশি নারী বিজ্ঞানীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে তারা হলেন- আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র-বাংলাদেশের ফেরদৌসি কাদরী। অন্যজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়মা সাবরিনা।

  •  
  •  
  •  
  •