বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বাকৃবি গবেষকদের সারথি হওয়ার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর

রোহান ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) দুই দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালা শনিবার (২৯ মে) থেকে শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

এসময় কৃষিক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছেন, সবুজ বিপ্লবের কথা বলেছেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের কথা বলেছেন। দেশের প্রথম বাজেটের ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০০ কোটি টাকাই বঙ্গবন্ধু কৃষি খাতে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আগামী পাঁচ বছর বাজেটের ৩১ ভাগ বরাদ্দ হবে কৃষিতে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পরবর্তীকালে ক্ষমতায় এসে আবারো কৃষিখাতকে গুরুত্ব দিয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কৃষিক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েছেন, সারের দাম কমিয়েছেন, সেচের ব্যবস্থা করেছেন। যার ফলে ধান উৎপাদনে এক বিপ্লব সাধিত হয়। ফলে ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টন থেকে উৎপাদন বেড়ে ২ কোটি ৬৯ লক্ষ টন হয়েছিলো। কৃষিক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়ে গিয়েছিলো।

বাকৃবি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আপনাদের সারথি হতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনকে ধরে রাখতে গবেষণা আরো বাড়াতে হবে, বিভিন্ন উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে হবে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ-চাষাবাদের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। সরকার এক্ষেত্রে সবসময় আপনাদের সাহায্য করবে।

কৃষি অর্থনীতিবিদদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনারা কৃষি উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করবেন, বিভিন্ন তথ্য যোগার করবেন এবং জাতিকে আগামী দিনের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।

এসময় পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেন, প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির অন্যতম কারন হলো পরিকল্পনার সাথে বাজেটের সুষ্ঠু সমন্বয়। ষষ্ঠ, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে, বর্তমানে আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি এবং বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যার একশ বছরের পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থাৎ একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় কৃষির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ছিলো ৩.২ শতাংশ। আমাদের লক্ষ্য ছিলো ৪ শতাংশ। আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারি নি। তাই কৃষিখাতে ব্যাপক রুপান্তর প্রয়োজন। কৃষির প্রবৃদ্ধি ছাড়া অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে না। আমাদের দেশে কৃষিখাতে প্রচুর বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছে। এর মূল নায়ক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের কৃষিবিদরা। কৃষির অগ্রগতি বজায় রাখতে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে ও গবেষণা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। অল্প জমিতে কিভাবে বেশি ফসল উৎপাদন করে এদেশের মানুষের চাহিদা মেটানো যায় সে বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য বাউরেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন ফসলের জাত বা কৃষি প্রযুক্তি কিভাবে কৃষকের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া যায় এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। কর্মশালাটি আয়োজনের জন্য বাউরেসের পরিচালক ও সহকারী পরিচালককে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন। কৃষির উন্নয়নে বিপত্তি তুলে ধরে তিনি বলেন প্রতি বছর আমাদের আবাদী জমি ৭০ হাজার হেক্টর করে কমছে। আমাদের যোগ্য গবেষকদের সংখ্যা এখন শতাধিক কিন্তু কৃষি গবেষণার জন্য অর্থ সরবরাহ অপ্রতুল। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অর্থ সরাসরি পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রীর নিকট পরামর্শ ও অর্থ সহায়তার দ্বার উন্মোচন করার অনুরোধ করছি।

বাউরেস সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি অনুষদের মধ্যে ভেটেরিনারি অনুষদের গবেষকদের পাবলিকেশন সংখ্যা ও এইচ ইনডেক্স স্কোর তুলনামূলকভাবে বেশি।

উল্লেখ্য, কর্মশালাটিতে এইচ-ইনডেক্সের উপর ভিত্তি করে এ বছর মোট ১৭ জনকে ‘গ্লোবাল রিসার্চ ইমপ্যাক্ট রিকোগনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ প্রদান করা হয়। এছাড়া কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য খামার পর্যায়ের ৬ জন উদ্যোগতাকে “প্রফেসর ড. আশরাফ আলী খান স্মৃতি কৃষি পুরস্কার-২০২১” প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্প থেকে উন্নত মানের ইমপ্যাক ফ্যাক্টর জার্নালে আর্টিক্যাল প্রকাশ করায় প্রকাশনা খরচের অংশ হিসেবে এ বছর ১৭ জনকে ১০০ ডলার করে প্রদান করা হয়।

কৃষি উদ্ভাবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডীন এবং জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো: আব্দুর রহিম কে এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মেজবাহুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

  •  
  •  
  •  
  •  

Tags: , , ,