নিজস্ব প্রতিবেদক-

ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথ উদ্যোগে দুইদিন ব্যাপী ১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার আয়োজিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে সেমিনারে উদ্বোধনী আয়োজিত হয়।

সেমিনারে গবেষক ও বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সাথে-সাথে পুরো পৃথিবী জুড়েই প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস পোল্ট্রি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে তাই পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং টেকসই করতে হবে ।

বক্তারা আরও বলেন, পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়েই উৎপাদন বাড়াতে হবে, কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ইন্ডাষ্ট্রি বড় হচ্ছে তাই রিসাইক্লিং-এর কথাও গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকার এ ধরনের শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে পারেন।   

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মুরগির জাত উদ্ভাবন করতে হবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, যেভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বাড়ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে- তাতে নতুন নতুন রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে। আগামীতে পোল্ট্রি বিজ্ঞানীদের কাজ আরও অনেক বাড়বে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু, খরা সহিষ্ণু ধানের মত শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মুরগির জাত উদ্ভাবন করতে হবে। 

তারা আরও বলেন, খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা না থাকলে কাউকেই পোল্ট্রি খামারের নিবন্ধন দেয়া ঠিক হবেনা। খামারিদের বোঝাতে হবে একের অসতর্কতা অন্যের ক্ষতির কারণ। এভাবেই পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এন্টিবায়োটিক ও ওষুধের ব্যবহার বাড়ার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। 

প্রথম দিনের অনুষ্ঠিত সেশনগুলোতে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ইউজিসি প্রফেসর ড. এস.ডি চৌধুরি, বাকৃবি’র সাবেক উপাচার্য্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, বিএলআরআই এর সাবেক চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. গিয়াসউদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মেম্বার ডিরেক্টর ড. মো. রফিকুল ইসলাম, বাকৃবি’র প্রফেসর ড. কে.এম. সাইফুল ইসলাম এবং প্রফেসর ড. মো. শওকত আলী। কো-চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এ.টি.এম মাহবুব-ই-এলাহী, প্রফেসর ড. মো. বজলুর রহমান মোল্লা, বাকৃবি’র ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মো. বাহানুর রহমান, প্রফেসর ড. সুকুমার সাহা, প্রফেসর ড. মো. গোলজার হোসেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. বয়জার রহমান, পরিচালক উৎপাদন ড. এ.বি.এম খালেদুজ্জামান এবং প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার সহ আরও অনেকে।

সেমিনারে পোল্ট্রি শিল্পে বিদ্যমান ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে সে বিষয়ে ৮৮টি দেশী-বিদেশী টেকনিক্যাল পেপার উপস্থাপন করা হয়েছে।

ওয়াপসা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রামাণিক বলেন, পোল্ট্রি বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষকগণ পোল্ট্রি বিজ্ঞানকে প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন সমাধান উপহার দিচ্ছেন। বিগত ২৮ বছর ধরে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা- ব্যবসায়ী ও বিজ্ঞানীদের মাঝে সম্পর্কের সেতু বন্ধন তৈরি করেছে। বিজ্ঞানী-গবেষকদের কাজ কখনও শেষ হয়ে যায় না কারণ প্রতিটা দিনই এক একটা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। জরাজীর্ণতাকে কাটিয়ে নতুন এক সম্ভাবনাময় দেশ গড়ার ডাক এসেছে আমাদের সবার জন্য। নতুন ও অজেয় কে জয় করার চেষ্টা আমাদের নিত্যদিনের কাজেরই অংশ। সঙ্গত কারণেই আমাদের এবারের সেমিনারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “সাস্টেইনেবল পোল্ট্রি ফর ইমার্জিং বাংলাদেশ”। 

বিপ্লব আরও বলেন, আমাদেরকে সাধারণ খামারিদের কথা ভাবতে হবে কারণ তাঁদের সংখ্যাই বেশি। খামার থেকে শুরু করে খাবারের প্লেট পর্যন্ত পুরো চেইনকেই সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। 

এসময় ওয়াপসা বাংলাদেশের সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চাই। তাই অভিধান থেকে ‘অপুষ্টি’ শব্দটি মুছে ফেলতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাগুলোই আগামীর বাংলাদেশ, আগামীর পৃথিবী গড়তে সহায়ক হবে। 

তিনি আরো বলেন, ভোক্তাদের ধারণা পোল্ট্রিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এখন প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক, ফাইটোজেনিক, এসেন্সিয়াল অয়েল  ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে। 

 

এসবি/ আশিক