বাকৃবিতে নতুন কোর্স খোলা নিয়ে বিড়ম্বনা

বাকৃবি প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) “বিএসসি ইন ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট” নতুন কোর্স চালু করা নিয়ে শুরু হয়েছে বিড়ম্বনা। চলছে বন্ধ করার আন্দোলন। ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও পর্যালোচনা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার এদেশে উৎপাদিত খাদ্যের গুণগতমান ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ফুড সেফটি অ্যাক্ট-২০১৩ তৈরি করে। এ অ্যাক্টের আওতায় ২০১৫ সালে ফুড সেফটি অথোরিটি নামে একটি স্বায়ত্বশাসিত নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা গঠিত হয়। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ও ফুড সেফটি অথোরিটি যৌথভাবে গবেষণা চালিয়ে এদেশে উপাদিত খাদ্যের গুনগতমান ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রতিটি বিভাগে, জেলায় ও উপজেলায় পর্যায়ক্রমে সেফ ফুড অফিসার নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সেফ ফুড অফিসার হিসেবে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গ্রাজুয়েট তৈরিতে বিএসসি ইন ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে কোর্স কারিকুলাম তৈরিতে সহযোগিতার জন্য এফএও আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে এফএও-ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিদর্শন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই কোর্স চালুর উপযুক্ত বলে মনে করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এফএও-ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয় এর পরামর্শে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম প্রাথমিকভাবে গঠন করে। দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে একটি যুগোপযোগী কারিকুলাম তৈরী হয় যা পরবর্তীতে বাকৃবিতে পরিবর্তিত হয় বলে জানা গেছে। ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কারকুলামটি তৈরি করা হয়েছিল তাতে কৃষি অনুষদের ৫টি বিভাগের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও পরবর্তীতে ১৩ টি বিভাগের সংশ্লিস্টতা চলে আসে যাদের নতুন এই কোর্সটির সাথে সামজ্ঞস্য নেই বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়। এমনিভাবে অন্যান্য অনুষদ থেকে পরবর্তীতে এমনকিছু কিছু কিছু কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা প্রাথমিক কারিকুলাম থেকে প্রায় ৫০% এর বেশী পবিবর্তিত হয়েছে।

এদিকে ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তৈরিকৃত কারিকুলা বাংলাদেশ কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের বিএসসি ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং কারিকুলামের সাথে বহুলাংশে মিল থাকায় তাদের গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানে মৎস্য-প্রাণিবিদ্যা, পশু পালন-ভেটেরিনারি গ্রাজুয়েটদের ন্যায় মাঠ পর্যায়ের নিয়োগ নিয়ে বিদ্যমান সমস্যার অনুরূপ সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর পরিসরে হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বিধায় অনুষদীয় সভায় উক্ত ডিগ্রি চালুর না করে মাস্টার্স ইন ফুড সেফ্টি চালু করার পক্ষে মত দেন।

এ প্রসঙ্গে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির একজন সদস্য প্রফেসর ড. সুকুমার সাহা বলেন, এ কোর্সের গ্র্যাজুয়েটরা সেফ ফুড অফিসার হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করবেন তা শুধুই নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার কাজ। বাকৃবির বিএসসি ইন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি এবং মাষ্টার্স ইন পাবলিক হেলথ কোনটির সাথে এটি সাংঘর্ষিক নয় বলে তিনি জানান। এছাড়া একটি বিভাগকে (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ) বন্ধ করে দিয়ে নতুন একটি বিভাগ চালু করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. সুকুমার সাহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ একটি নতুন বিভাগ খুলতে সময়সাপেক্ষের বিষয় তাই এ সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এরকম ঘটনা ঘটছে বলেও তিনি দাবি করেন।

অপরদিকে কমিটির অন্য সদস্য প্রফেসর ড. আব্দুল আলীম বলেন এ গ্রাজুয়েটরা টেকনিক্যাল ও রেগুলেটরি উভয় কাজ করবেনন যা আমাদের কৃষি গ্রাজুয়েটরা ফুড সেফটি বিষয়ে মাষ্টার্স করে এ দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন যেখানে একটি গ্রাজুয়েট তৈরি করতে ৪ বছর সময় লাগবে সেখানে দেড় বছরে একটি মাষ্টার্স করে এ কাজের উপযুক্ত কর্মকর্তা তৈরি করা যাবে।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক সংশ্লিস্ট বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন যে ডিগ্রী বিশ্বের কোথাও নেই তা শুধুমাত্র বাকৃবিতে হতে হবে কেন? যদি হতেই হয় তাহলে সম্পূর্ণ নতুন এই কোর্সের জন্য ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরিকৃত কারিকুলাম অনুযায়ী একটি নতুন ইনিস্টিটিউট হতে পারে।

এদিকে এ কোর্স চালু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছর ধরে কৃষি প্রকৌশল অনুষদ থেকে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। নতুন যে ডিগ্রি খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে তার পাঠ্যক্রমের ৮০ ভাগ আমাদের সাথে মিল রয়েছে। নতুন করে অন্য ডিগ্রি দেওয়া আমাদের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। যদি ডিগ্রি দিতেই হয় তবে কৃষি প্রকৌশল অনুষদ থেকে দিতে হবে। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, আমাদের সাংঘর্ষিক এ নতুন ডিগ্রি খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।

 

  •  
  •  
  •  
  •