হতাশায় জর্জরিত বাকৃবির ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভুগছেন হতাশায়, রয়েছে ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধীনে ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট নামে একটি বিভাগ চালু হয়। ২১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় এ বিভাগের যাত্রা।

তবে, কিছু দিনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের প্রবল অসম্মতি সত্বেও অনুষদ থেকে বিভাগটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি সেন্টার ফর ফুড সিকিউরিটি (আইআইএফএস) ইন্সটিটিউট এর অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়। এ নিয়ে আন্দোলন করলেও তেমন কোনো ফল পায়নি তারা। কৃষি অনুষদের ছাত্র সমিতি থেকেও কোনো সাহায্য পায়নি। অত্র বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের ভাষ্য মতে, অনেক শিক্ষকদের অবস্থানও তাদের বিপক্ষে ছিলো।

ইন্সটিটিউটের অধীনে গেলে তাদের সকল দাবি দাওয়া মেনে নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস প্রদান করা হলেও বাস্তবে তার কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। বরং আরো অবহেলার শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক অনুষদের বিভিন্ন কোর্স তাদের কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, নিয়মিত তাদের ক্লাস নেওয়া হয় না। নিজস্ব কোনো গ্যালারি না থাকায় তাদেরকে সব সময়ই বিভিন্ন অনুষদে গিয়ে ক্লাস করতে হয়। ওই সময় অত্র অনুষদের শিক্ষার্থীদের ক্লাস থাকার অযুহাতে শিক্ষকরা তাদের ক্লাস নিতে চান না৷ এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্লাস করতে গেলে তাদের প্রায়শই শুনতে হয় যে, “তোমরা আমাদের শিক্ষার্থী না”। এছাড়াও শিক্ষকরা তাদের কি পড়াবে এবং কি পড়াবে না, এই নিয়েও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। ঠিক সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না। তারা পরীক্ষা দিতে আগ্রহী হওয়া সত্বেও তাদের রুটিন প্রকাশ করা হচ্ছে না। যেখানে একই বর্ষের অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু করে দিচ্ছে সেখানে ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট এর শিক্ষার্থীরা এখনো জানেনা তাদের পরীক্ষার রুটিন কবে দিবে।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের ক্লাস প্রতিনিধি সহ অনেক বারই শিক্ষক এবং ইন্সটিটিউট এর পরিচালক এর সাথে ক্লাস-পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান কথা বলেছে কিন্তু এখন পযন্ত আশানুরূপ কোনো ফলাফল তারা পায়নি। এমনকি ফলাফল প্রকাশ নিয়েও বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। কোর্স কোড নিয়ে ইন্সটিটিউট এবং অনুষদগুলোর অন্তঃ দ্বন্দ থাকার দরুণ ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের বিভাগের কোনো নিজস্বতা নাই। তাদের স্টাইপেন্ড দেওয়া হয় কৃষি প্রকৌশলী অনুষদের অধীনে। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফর্ম পূরণে তাদের বিভাগের নাম থাকে না।

প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো না থাকায়, কোর্স কোড নিয়ে জঠিলতা থাকায় এবং একাডেমিক সিদ্ধান্তগুলো দেরিতে পাওয়ায় অনেক অসুবিধা হয় বলে জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্সটিটিউটর  জনবল কাঠামোতে ১৫ টি শিক্ষকের পদ থাকলেও বর্তমানে ২ জন শিক্ষক রয়েছেন। নিজস্ব শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির অফিস স্টাফরা দীর্ঘদীন ধরে কাজ করলেও তাদের স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় তাঁরা মনোবল হারিয়েছেন বলেও জানা যায়।

এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আইআইএফএস এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি বলেন- তাদের কোন কিছু থেমে নেই, করোনার পর আগের সব পরীক্ষা হয়ে গেছে, এখন রেজান্ট দেওয়া হচ্ছে। সামনের পরীক্ষার রুটিন ইতিমধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠান, শুরু থেকেই তাদের হতাশা তো আছেই। তিনি আরও বলেন নতুন প্রতিষ্ঠান কিছু সমস্যা তো থাকেই, আশাকরি সামনের দিনগুলোতে আর কোন সমস্যা থাকবে না।

গত ৩১ মার্চ  একাডেমিক কাউন্সিলে কোড সংক্রান্ত জঠিলতা দুর হওয়ায় পরীক্ষার রুটিন দ্রুত প্রকাশ করা সম্বব হবে বলেও জানা যায়। এছাড়া ইন্সটিটিউটটির ৫ তলা নিজস্ব ভবনের প্রস্তাব রয়েছে, এটি হয়ে গেলে অবকাঠমোগত সমস্যা আর থাকবে না।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3