অনলাইন পরীক্ষা ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর বাস্তবতা
রোহান ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনা মহামারির প্রভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে সরকারি ঘোষণা অনুসারে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার চেষ্টা করা হলেও এতে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি অনেক শিক্ষার্থীকে। অনলাইন ক্লাস কিংবা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের উপর করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বেশ কিছু বিভাগের জরিপে দেখা গেছে, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছেন না ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, গণমাধ্যমে উঠে আসা বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো না কোনো কারণে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারছেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন?
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরাই তার কারণ নির্ণয় করে বলছেন যে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ অসচ্ছলতার কারণে এমবি/নেট কিনতে না পারা বা কারো কারো তা আবার ক্রয়ের সামর্থ্য থাকলেও ইন্টারনেটের গতি অতিমাত্রায় স্লো হওয়ার কারণে তারা ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।
আবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অ্যান্ড্রয়েড ফোন না থাকাটাও অন্যতম কারণ হিসেবে আলোচনায় এসেছে। এ সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়। অনলাইনে ক্লাসের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা অপরিহার্য। যা আমাদের দেশে অনুপস্থিত। পল্লীবিদ্যুতের অবস্থা তো আরও শোচনীয়।
সম্প্রতি করোনার কারণে আটকে থাকা বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্লাস পরীক্ষা নিয়ে সময়ক্ষেপণের পরিবর্তে দ্রুত অনলাইন কিংবা সশরীরে ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে সবুজ বাংলাদেশ 24 ডটকমকে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অনলাইনে ক্লাস টেস্ট নেওয়ার সংবাদটি তাদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি করেছে। তাদের অনেকেরই নিজস্ব ল্যাপটপ বা ভালো মানের ডিভাইস নেই। অনেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে যেখানে ব্রডব্যান্ড সুবিধা নেই, মোবাইল নেটওয়ার্কও দুর্বল। অনলাইন ক্লাসের সময়ই অনেককে বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে ক্লাস করতে হয়েছে।
কৃষি অনুষদের লেবেল ৪- সেমিস্টার ২ এর একজন শিক্ষার্থী জানান, অনলাইন ক্লাসে তাদের মোট শিক্ষার্থীর ৫০% বেশিরভাগ ক্লাসে নানা কারনে উপস্থিত হতে পারে নি। এমন অবস্থায় ক্লাস টেস্ট অনলাইনে অনুষ্ঠিত হলে তা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা বলা মুশকিল।
অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, যেহেতু ক্লাস টেস্টের সিলেবাস ফাইনালেও অন্তর্ভুক্ত থাকে সেহেতু ক্লাস টেস্ট অনলাইনে না নিয়ে একেবারে ফাইনাল পরীক্ষা অনলাইনে বা সশরীরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে পালাক্রমে একটি অথবা দুটি করে গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে পরীক্ষা নেওয়া যায়।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ১২ জুন পর্যন্ত বাড়িয়ে পরদিন ১৩ জুন থেকে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি নির্ভর করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টিকা দেওয়ার ওপর।