করোনার থাবায় যশোরে রেণু পোনা উৎপাদন ধসের মুখে
যশোর প্রতিনিধি:
প্রচন্ড খরতাপ, করোনা আর কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে এবারও যশোরে মাছের রেণু উৎপাদনে বড় ধরনের ধসের আশঙ্কা করছেন হ্যাচারি মালিকরা। গত বছরও করোনার কারণে শ্রমিক ও পরিবহন সংকটের জালে আটকা পড়ে এখানকার ৪২টি হ্যাচারি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রেণু উৎপাদনের এই ভরা মৌসুমে করোনা ও কঠোর নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়া। এ অবস্থায় এ খাতে বিভিন্নভাবে জড়িত ৫ লাখ মানুষ বেকার হওয়ার শঙ্কায় আছেন।
যশোর জেলা মৎস্যচাষি ও হ্যাচারি মালিক সমিতির নেতারা জানান, দেশের মোট চাহিদার ৬০ ভাগ রেণু যশোরের হ্যাচারিতে উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে কার্পজাতীয় রেণু উৎপাদন হয় ৬৪.৮৬ টন। যশোরে কার্পজাতীয় রেণুর চাহিদা ১৫.২৩ টন। বাকি প্রায় ৫০ টন রেণু দেশের বিভিন্ন স্থানের মাছচাষিরা নিয়ে যান। যশোরের হ্যাচারিগুলোয় রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারসহ আরও অনেক মাছের রেণু উৎপাদন হয়।
হ্যাচারিগুলোয় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কাজ করে থাকেন। এর বাইরে জেলায় ১৮ হাজার ৮৪ হেক্টর আয়তনের ৫১টি ছোট-বড় বাঁওড় রয়েছে। মাছের পোনা চাষ হয় প্রায় ৬ হাজার নার্সারিতে। এসব জায়গায় কর্মসংস্থান হয়েছে সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি মানুষের। রেণু উৎপাদন যদি এবারও ব্যাহত হয়, তাহলে হ্যাচারি মালিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি রেণু, পোনা ও মাছ উৎপাদনে জড়িত পাঁচ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে পড়বে। দেশের মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাবে।
যশোরের মৎস্যপল্লী হিসেবে পরিচিত চাঁচড়ার লুলু ফিস হ্যাচারির মালিক অহিদুল্লাহ লুলু বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে প্রায় সব পুকুর শুকিয়ে গেছে। এখনো যেসব হ্যাচারিতে রেণু বা চারা মাছ তৈরি হচ্ছে, পুকুরে পানি না থাকার কারণে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে না। কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই দিন ধরে বাইরে থেকে ক্রেতাও আসছে না। গত বছরও বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছি। এবারও যদি একই রকম অবস্থা হয়, তাহলে আর টিকে থাকার উপায় থাকবে না।’ চারা মাছের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ‘২৫ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে এতো কঠিন পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি।’