রোহিঙ্গা নিধনে অভিযুক্ত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা বরখাস্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত অভিযানে অভিযুক্ত মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মং মং সোয়েকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের শীর্ষ সাত সেনা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের একদিনের মধ্যে মিয়ানমার অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিলো।

এর আগে সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের শীর্ষ সাত সেনা জেনারেলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছে বলে জানায়। এর কয়েক ঘণ্টা পরই সামরিক বাহিনী থেকে মং মংকে বরখাস্তের ঘোষণা আসলো।

মেজর জেনারেল মং মং সোয়ের ওপর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। দেশটির পশ্চিমাঞ্চল রাখাইনের কমান্ড প্রধান মেজর জেনারেল মং মং সোয়ে মার্কিন ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েন। ওই বছরের শেষের দিকে তাকে রাখাইন থেকে প্রত্যাহার করে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। এছাড়া অপর একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন।

সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফের দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রাখাইন অঞ্চলে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমারের পুলিশের ওপর রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির আক্রমণের সে অঞ্চলের নিরাপত্তা পকিল্পনা যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় জেনারেল মং মং সোয়ে-কে সামরিক বাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, মিয়ানমারের সাত সেনাকর্মকর্তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ। একই সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি, ইইউতে প্রশিক্ষণ অথবা পারস্পরিক সহযোগিতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইইউর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির গণতান্ত্রিক যাত্রায় সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১২ সালে মিয়ানমারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছিল ইইউ।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। জাতিসংঘ রাখাইনে সেনা অভিযানকে জাতিগত নিধনে পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে চিহ্নিত করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছে মিয়ানমার।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের জেরে গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই সময় রাখাইনে পশ্চিমাঞ্চল কমান্ডের অভিযানের সময় চালানো নৃশংসতা ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী মং মং। এইট সিকিউরিটি পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার থ্যান্ট জিন ওও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা, রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধেও।

দেশটির সেনাবাহিনীর আরো পাঁচ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ; যাদের সবাই জেনারেল পদমর্যাদার।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা আরেকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অং কেও জ-কে একমাস আগে স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তিনিও রাখাইন অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

  •  
  •  
  •  
  •  

Tags: