৯৮-র মতো বন্যার পদধ্বনি তিস্তায়,রেড অ্যালার্ট ডালিয়া পয়েন্টে

নিউজ ডেস্কঃ

১৯৯৮ সালের মতো বড় বন্যার পদধ্বনি শুরু হয়েছে তিস্তা নদীর প্রবেশ দ্বারে। উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ওপাশে ভারত ছেড়ে দিয়েছে গজলডোবার ব্যারাজের পানি। আর সেই পানির তোড় সামলাতে না পেরে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার মধ্যবর্তী তিস্তা ব্যারাজে খুলে রাখা হয়েছে ৪৪টি স্লুইস গেট। যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে তিস্তা অববাহিকায় নামছে ২ হাজার ৪৫৭ কিউসেক পানি। ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার (১৩ জুলাই) সকাল থেকে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, তিস্তার নদীগর্ভ সংস্কার কখনোই না হওয়ায় এই পানি প্রবল বেগে তীর উছলে ঢুকে পড়ছে আশেপাশের গ্রামগুলোতে। ফলে প্রথম দফার বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পর ঘরে ফেরা মানুষ এবার ঘর ছেড়ে বা ভেঙে নিয়েই সরতে বাধ্য হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। অথচ এমন বড় বন্যার সতর্কতা থাকার পরেও ত্রাণ প্রস্তুতি মোটেও সুবিধাজনক নয় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের। কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ প্লাবিত হলেও এখনও কোনও ত্রাণ বিতরণ হয়নি ডিমলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সংগৃহীত ত্রাণের পরিমাণও স্বল্প।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে গেজ পাঠক নুরুল ইসলাম জানান, গত রবিবার (১২ জুলাই) ডালিয়া পয়েন্টে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সোমবার তা ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র জানায়, ভারত থেকে নেমে আসা পানি অব্যাহত থাকলে এটি সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 

এদিকে, তিস্তার ভয়াবহ ঢলের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তিস্তা অববাহিকার মানুষ উঁচু স্থানে সরে যেতে শুরু করেছে। পাউবোর পক্ষে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট ও মাইকিং।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ব্যারাজের পূর্বদিকে ফ্ল্যাট স্লুইস (ফ্ল্যাট বাইপাস) এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নজরদারিতে রেখেছে। পাশাপাশি ব্যারাজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পাউবো। এছাড়াও ব্যারাজ তীরবর্তী এলাকার পরিবারগুলোকে মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সোমবার ভোর থেকে ভারতের তিস্তা নদীর দো-মোহনী পয়েন্টে বিপৎসীমার (৮৫.৯৫ সেন্টিমিটার) ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করছে। ভারতের ওই পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বন্যার পানি ধেয়ে আসায় নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে আজ বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় দুই উপজেলার (ডিমলা, জলঢাকা) পাঁচ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছে।

ভারতের গজলডোবার মাধ্যমে গতকাল রবিবার রাত পর্যন্ত প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজার ৪৫৭ কিউসেক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই হিসেবে ২০ মিনিটে বাংলাদেশে ভারতের পানি প্রবেশ করে প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ কিউসেক। পাহাড়ি ঢলে ও সমতলের প্রচুর বৃষ্টিপাতসহ গজলডোবার স্লুইস গেট খুলে দেওয়ায় ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ১৯৯৮ সালের বন্যার মতো হতে পারে।

উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক মুঠোফোনে জানান, তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও গজলডোবা ব্যারাজের পানি অতিক্রম করায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছে।

 

এদিকে, ডিমলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী সহ কিশামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর, চরখড়িবাড়ী, পূর্ব খড়িবাড়ী, পশ্চিম খড়িবাড়ী, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার, বাইশ পুকুর, ছাতুনামা ও ভেন্ডাবাড়ী এলাকার বানভাসী মানুষ গবাদি পশু নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

অপরদিকে, জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও, বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার অসংখ্য ফসলি জমির বীজতলা ও রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোয় কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর স্রোত। ভেসে গেছে মাছের খামার। গ্রামের রাস্তায় বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। এতে শিশু ও বয়স্করা পড়েছে বিপাকে। বন্যার্তরা বেঁচে থাকার তাগিদে সমানে লড়াই করে যাচ্ছে।

 

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, উপজেলার সকল কর্মকর্তাগনকে সঙ্গে নিয়ে মনিটারিং টিম গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকা নজরদারি করছেন। তিনি জানান, প্রথম দফা বন্যায় ১ দশমিক ৭৭০ মেট্রিক টন চাল, নগদ এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ৬০ মেট্রিক টন চাল, ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। তা দ্রুত বিতরণের কাজ শুরু হবে। বানভাসিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  

Tags: