চিতলমারীর চিতল এখন আর দেখা যায়না

নিউজ ডেস্কঃ

চিতল অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ। এ মাছের দেহ লম্বা ও চ্যাপটা। পিঠের অগ্রভাগ দৃঢ়ভাবে কুঁজো, অঙ্কীয়দেশ প্রায় সোজা। চিতল মাছের মুখ বড় আর পৃষ্ঠীয় পাখনা হলুদাভ ধূসর বর্ণের। কখনো কখনো চিতল মাছের ওজন ১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। চিতল মিষ্টি পানির মাছ; তবে আজকাল এ মাছের বাণিজ্যিক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের দেশেও।

চিতল মাছ চাষের জন্য এর পোনা আজকাল হ্যাচারিতে পাওয়া যায়। এ মাছ সাধারণত এপ্রিলের শেষ থেকে জুলাই পর্যন্ত অমাবস্যা বা পূর্ণিমার রাতে ডিম দিয়ে থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১২ দিনের মতো লাগে।

চিতল মাছের নামে একটি জনপদ রয়েছে দেশের বাগেরহাট জেলায়। সেই চিতলমারী জনপদটি বর্তমানে উপজেলা শহর। জনশ্রুতি আছে, চিতলমারী উপজেলা মধুমতী, চিত্রা ও বলেশ্বর-এই তিন নদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। এক সময় স্থানটি চিতল মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল এবং জেলেরা সেখান থেকে প্রচুর চিতল মাছ ধরত।

আর এ কারণেই এই তিন নদীর সংগমস্থলের তীরের জনপদকে স্থানীয় জনসাধারণ চিতলমারী নামে আখ্যায়িত করেছে। আবার এও জনশ্রুতি আছে, ব্রিটিশ আমলে চিত্রা, মধুমতী আর বলেশ্বরের মোহনা দিয়ে ভোঁ বাজিয়ে ছুটে যেত যাত্রীবাহী জাহাজ। নদীতে থাকত প্রবল স্রোত। হঠাৎ একবার প্রচণ্ড ঝড়ে একটি জাহাজ তলিয়ে যায় নদীর অতলে। ডুবন্ত জাহাজের মধ্যে জন্ম নেয় অসংখ্য চিতল মাছ।

এত চিতল মাছ উৎপন্ন হয় যে, তা খেয়ে মানুষ শেষ করতে পারে না। এ কারণে এই এলাকার মানুষের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় ভাতের সঙ্গে প্রধান খাদ্য থাকত চিতল মাছের ঝোল। এ অঞ্চলের লোকজন জায়গাটিকে চিতল মাছ মারার স্থান হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের এলাকার নামকরণ করে চিতলমারী। তখন চিতলমারী ছিল চর এলাকা।

বর্তমানে চিতলমারী বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিতল মাছের উৎপাদনও কমে গেছে চিতলমারীর নদ-নদী থেকে। এখন এসব নদী-বিলে সহজে ধরা পড়ে না চিতল। চিতলমারী উপজেলার আয়তন ১৯২ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮১০।

চিতলমারী উপজেলার উত্তরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা; দক্ষিণে কচুয়া ও বাগেরহাট সদর উপজেলা; পূর্বে নাজিরপুর উপজেলা; পশ্চিমে মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও বাগেরহাট সদর উপজেলা।

চিতলমারীতে থানা স্থাপিত হয় ১৯৮১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর। এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো: কলাতলা, চর বানিয়ারী, বড়বাড়িয়া, শিবপুর, সন্তোষপুর ও হিজলা। চিতলমারীর একটি প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ চর বানিয়ারীর দুর্গাপুর শিবমঠ। চিতলমারীর ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে রয়েছে: হিজলা ইউনিয়নের নীলকুঠিতে ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা নীল বিদ্রোহীদের বুকের ওপর ভারী পাথরচাপা দিয়ে শাস্তি দিত।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা মিলে চিতলমারীর খালিশাখালী ও বাবুগঞ্জ বাজারে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চালায় এবং তাদের বাড়িঘর লুটপাট করার পর তা জ্বালিয়ে দেয়। তাছাড়া শত শত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে হত্যা করে। চিতলমারীতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ও স্মৃতিস্তম্ভ এবং তা অবস্থিত সন্তোপুরে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: