নতুন মাদকের স্বর্গরাজ্য ঢাকা !

নিউজ ডেস্ক:

দেশে চার ধরনের নতুন মাদক পাওয়া গেছে গত দুই বছরে। এগুলো এখনও ঢাকার বাইরে ছড়ায়নি। এমনই ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

নতুন মাদক সংশ্লিষ্ট যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা ঢাকা মহানগর এলাকাতেই ধরা পড়েছে। তবে ‘আইস’ বা ‘ক্রিস্টাল মেথ’ এর একটি বড় চালান টেকনাফ থেকে জব্দ করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সেটিও ঢাকার জন্য আনা হচ্ছিল। ঢাকামুখী এসব মাদক কারবারিদের আটকানো না গেলে ইয়াবার মতো নতুন মাদকও সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে আইসসহ রাকিব উদ্দিন নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছিল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিগাতলার ৭/এ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসার নিচতলায় অভিযান চালিয়ে একটি মাদক তৈরির ল্যাবের সন্ধান পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় হাসিব মোহাম্মদ মোয়াম্মার রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। মোয়াম্মার মালয়েশিয়া থেকে লেখাপড়া করে ঢাকায় নিজেদের ভবনে ওই গবেষণাগার গড়ে তুলেছিল। সেখানে আইস বানাতো সে। এর কয়েক মাস পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এক নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেফতার করে অধিদফতরের সদস্যরা।

২০২০ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও তার পাঁচ সহযোগীসহ ছয়জনকে ৬০০ গ্রাম আইসসহ গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর থেকে র‌্যাব, পুলিশ ও অধিদফতরের অভিযানে আইসের একাধিক চালান উদ্ধার করা হয়।

‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথ ইয়াবার চেয়েও শক্তিশালী। ইয়াবায় মিথাইল অ্যামফিটামিন ব্যবহার করা হয় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে। আইস বা ক্রিস্টাল মেথ মানে শতভাগ মিথাইল অ্যামফিটামিন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখেছি, আইস ও এলএসডি বেশ ব্যয়বহুল মাদক। ধনী পরিবারের সন্তানরা এসব সেবন করে। প্রতিবার আইস সেবন করতে তাদের খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এটি সবার পক্ষে কেনা সম্ভব না।’

গত দুই বছরে নতুন চার ধরনের মাদকসহ ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ডিএমপি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর গত দুই বছরে মোট তিন কেজি আইস আটক করেছে। গ্রেফতার করেছে ছয়জনকে। ২০২১ সালের মার্চে দুই কেজি আইসসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে টেকনাফের হ্নীলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, গত দুই বছরে তারা পাঁচটি অভিযানে আইস, এলএসডি, ডিএমটি ও ম্যাজিক মাশরুমসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম আইসসহ ১১ জন, এলএসডি’র ৪০টি ব্লট ও ৬০০ মিলিগ্রাম ডিএমটিসহ চারজন এবং ম্যাজিক মাশরুমের ৫টি বার ও ১২০টি স্লাইসসহ দুজন গ্রেফতার হয়। এসব চালান উদ্ধার করা হয় ঢাকা থেকে।

র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছি। নতুন মাদকের বিষয়েও তৎপর রয়েছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে নতুন মাদকসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছি।’

অপরদিকে, ২০২০ ও ২০২১ সালে নতুন মাদকসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপি। এসময় প্রায় পৌনে এক কেজি আইস ও ২ গ্রাম ১২ মিলিগ্রাম এলএসডি উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নতুন মাদকের বিষয়ে অনেক তথ্য পেয়েছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

২০২০ সালে ডিএমপিতে ১২ হাজার ৬১৯টি মাদকের মামলা হয়েছে। এসময় গ্রেফতার হয়েছে ১৮ হাজার ৫৫৫ জন। ২০২১ সালের প্রথম ছয়মাসে ডিএমপিতে মাদক মামলা হয়েছে ৭ হাজার ৪৪৩টি। গ্রেফতার হয়েছে ১০ হাজার ৫৫০ জন।

‘মাদক কারবারিরা বিভিন্ন মাদক দিয়ে সাপ্লাই চেইন ধরে রাখার চেষ্টা করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তৎপর থাকতে হবে।’ এমনটা উল্লেখ করে মানস-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘মাদক কারবারিরা বসে থাকে না। এক মাদকে বাধা পেলে অন্য মাদক দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3