আনন্দমোহন কলেজে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা

নিউজ ডেস্ক:

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেয়া সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার সকাল থেকেক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হলগুলো রয়েছে ফাঁকা। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

জানা যায়, শুক্রবার রাত ১১টা ৪৩ মিনিটে ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগকে জেলা শাখা ছাত্রলীগের অন্তর্ভুক্ত ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। পরে রাতেই আনন্দমোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ প্রতিবাদ জানিয়ে কলেজ গেটের সামনে প্রতিবাদ মানববন্ধন করে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে শনিবার সকাল থেকেই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একটি অংশ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় এবং ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।

দুপুর ১টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা ও হোস্টেল স্টিয়ারিং কমিটির নেতাদের সঙ্গে জরুরি সভা করে কলেজের আওতাধীন ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কলেজ কর্তৃপক্ষের নোটিশে ছাত্রদের শনিবার রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের রোববার সকাল ৮টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বর্তমানে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঘোষিত ২৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ২০২০ সালের নভেম্বরে বিলুপ্ত করা হয়।বর্তমানে কলেজে কমিটি বিলুপ্ত থাকায় সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়করা ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা যায়।

এদিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একাংশের অভিযোগ, জেলা ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ কলেজে এসে ককটেল ফাটিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। পরবর্তীতে উত্তেজনা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে একপক্ষ আরেকপক্ষকে ঠেকাতে কলেজের ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিয়ে হলসমূহ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে নির্দেশ জারি করে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন জানায়, “জেলা ছাত্রলীগের কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। মহানগর শাখার কতিপয় নেতাকর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলে কেউ কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ জেলার অধীনেই থাকবে।”

অপরদিকে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনি জানান, “মহানগরের ভেতরের সকল শাখা মহানগর ছাত্রলীগের আওতায় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গঠনতন্ত্র না মেনে মহানগরের ভেতর অবস্থিত আনন্দ মোহন কলেজকে জেলার আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে মানতে পারেনি আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাই কলেজের শিক্ষার্থীরা জেলা ছাত্রলীগকে আনন্দ মোহন কলেজে রাজনীতি করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।”

আনন্দমোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান সবুজ জানায়, আনন্দমোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, কে নিয়ন্ত্রণ করবে এ নিয়েই মূলত দ্বন্দ্বের জের বলে জানান তিনি।

কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমান উল্লাহ জানান, “কলেজের আইনশৃঙ্খলা ও হোস্টেল স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজের আওতাধীন ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অবস্থানরত তিনটি হলের ছাত্রদের শনিবার রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে এবং ৪টি হলের ছাত্রীদের রোববার সকাল ৮টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

আনন্দ মোহন কলেজের হল সুপার কামরুল হাসান বলেন, “কলেজে বিপুল সংখ্যক বহিরাগত এসেছিল। কলেজের পরিবেশ স্বাভাবিক ছিল না। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে হলসমূহ বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”

কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন বলেন, “কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3