
আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

হালিমা তুজ্জ সাদিয়া: আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯১৪ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ দিবসটি পালন করে আসছে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিনটি ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন করছে।
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নারী দিবসের প্রতিপাদ্য-২০২২ হিসেবে “নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ” নির্ধারণ করা হয়েছে।
উক্ত প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সংগঠন নানা কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উৎযাপন করে। নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সকল অগ্রগতি এবং উন্নয়নে করেছে সমঅংশীদারিত্ব। আর তাই সারা বিশ্বে বদলে গেছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন নারীর কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বীকৃতি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পিছনে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দিনটি ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে সে সময় গ্রেফতার হন অসংখ্য নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই।
এর তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারীশ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।
১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
নারী দিবস হচ্ছে- জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেয়ার দিন। এদিনে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসকে স্বরণ করে এবং ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করে, যাতে আগামী দিনগুলো নারীর জন্য আরও গৌরবময় হয়ে ওঠে।
বর্তমান সময়ে নারী দিবস উদযাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। আজও পৃথিবীর অনেক জায়গা আছে যেখানে নারীদের পুরুষের সমান অধিকার নেই। যেখানে নারীদের চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সেখানে নারীরা এখনো আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
অনেক দেশে নারীরা এখনো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া নারী নির্যাতনের ঘটনাও এখন দেখা যায় পৃথিবী সহ ভরতের বহু অংশে। এই কারনে বর্তমান সময়ে নারী দিবস উদযাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো নারী সমতার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা।
রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে নারীর সংখ্যা এখনো পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে এবং নারীর অর্থনৈতিক স্তরও পিছিয়ে রয়েছে। নারী দিবস উদযাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য হল নারীদের এই দিকে সচেতন করা এবং ভবিষ্যতে অগ্রগতির জন্য প্রস্তুত করা।
You must be logged in to post a comment.