করোনা মহামারীতে বেড়েছে বাল্যবিবাহ, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা

সাবরিন জাহানঃ

করোন ভাইরাস মহামারী চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের প্রবণতা আশংকাজনক হারে বেড়েছে। যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে অসংখ্য কিশোরীর শিক্ষার স্বপ্ন, লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার।

ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বাল্যবিবাহে শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি এবং দেশে বর্তমানে ৩৩ মিলিয়ন বাল্য কনে রয়েছে। যদিও আইন অনুযায়ী দেশে ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়েদের এবং ২১ বছরের আগে ছেলের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ। কোভিড -১৯ এর কারণে সারাবিশ্বে ১ কোটি অতিরিক্ত মেয়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে।

দীঘদিনের ব্যবধানের পর স্কুল খুললেও তাতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী বাড়বে এবং সেই সাথে বাড়বে বাল্যবিবাহ, সাম্প্রতিক জরিপে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাতক্ষীরা জেলার কিশোরী জোলি। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষে স্বাবলম্বী হয়ে দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করার। তার বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত বিধায় সামর্থ্য নেই কাজ করার। তার মা, স্থানীয় মানুষের বাড়িতে কাজ করে এবং এনজিও থেকে প্রাপ্ত একটি ছাগল পালন করে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন।

বর্তমানে ১৬ বছর বয়সী জোলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ষণ এর শিকার হয়েছিল এবং সাত মাস আগে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয় তাকে। কারণ মহামারীতে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তার পরিবার তার ব্যয় বহন করতে পারেছিল না।

উত্তর গাইবান্ধা জেলার দশ বছরের কিশোরী সুফিয়া আক্তারের গল্পটিও একইরকম। তার বাবা-মা তাকে ১৫ বছর বয়সেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল কারণ তারা তার স্কুলে পড়াশোনার ব্যয় বহন করতে পারেনি।

ব্র্যাকের কমিউনিটি ক্ষমতায়ন কর্মসূচী, (সিইপি) থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহের সংখ্যা ছিল ১৮৯ যা ২০২১ সালে বেড়ে হয় ২৮৯,অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় ৫৩% বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

সিইপির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক এবং খুলনা বিভাগের সমন্বয়কারী প্রসন্ত কুমার দে বলেছেন, “স্থানীয় সরকারের সহায়তায় আমরা এ অঞ্চলে কমপক্ষে ৯৬৯ টি বাল্য বিবাহের প্রচেষ্টা রোধ করলেও এর সংখ্যা ৭ –৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।” বৃদ্ধির কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ১৫ মাস যাবত স্কুল বন্ধ থাকায় নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলি তাদের মেয়ে সন্তানদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করছে।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির আনাদোলু এজেন্সিকে বলেছেন, “মহামারী চলাকালীন আর্থিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার ফলে শিশু বিবাহের ঘটনা বেড়েছে,এমনই কিছু পরিবার ইঙ্গিত দিয়েছে।” তিনি সতর্ক করেছেন, “বাল্যবিবাহের বৃদ্ধি স্কুলগুলির দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ থাকার সাথে সম্প্রিক্ত। এটি অনেক মেয়ে বাচ্চাদের স্কুল ছাড়তে বাধ্য করছে যা ভবিষ্যতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।”

সরকারের দাবি

শিক্ষামন্ত্রণালয় সম্প্রতি বলেছে যে বাল্যবিবাহ এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে যাওয়া রোধে সরকার নিয়মিত একাডেমিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশিরভাগ লক্ষ্যবস্তু শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ, রাইটস গ্রুপ এবং এনজিও কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যের তীব্র আপত্তি ও প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।

তবে এই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে দেশে বর্তমান বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক কোনও সরকারী গবেষণা করা হয়নি।

তিনি বলেন,“বাল্যবিবাহ রোধ ও সচেতনতা বাড়াতে আমাদের জেলা ও উপ-জেলায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প এবং অফিসিয়াল সংস্থা রয়েছে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে আমরা অবিলম্বে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়াসে রয়েছি। ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের বাল্য বিবাহ হ্রাস করার চেষ্টা রয়েছে”

তিনি আরও বলেছেন, বাল্যবিবাহ বাড়ার পেছনে আর্থিক সহ আরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এবং মহামারীটিরও অনেক বেশি প্রভাব রয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: ,