গর্ভপাতের জীবাণু ও সতর্কতা
এস এম আবু সামা আল ফারুকীঃ
মানুষ ও পশুপাখির গর্ভাবস্থায় জীবিত বা মৃত ভ্রূণ বেরিয়ে আসাকে গর্ভপাত বলে। গর্ভপাত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে জীবাণুগত গর্ভপাত উল্লেখযোগ্য। এসব জীবাণুর মধ্যে রয়েছে পরজীবী, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি।
পরজীবীর মধ্যে টক্সোপ্লাজমা, সারকোসিস্টিস, নিওস্পোরা, ট্রিপানোসোমা, ট্রাইট্রাইকোমোনাস; ব্যকটেরিয়ার মধ্যে ব্রুসেলা ও ক্লামাইডিয়া মানুষ ও পশুপাখির গর্ভপাতের অন্যত্তম কারণ ।
মানুষ ও প্রাণীতে গর্ভপাতের জন্য দায়ী টক্সোপ্লাজমা বিড়ালের মাধ্যমে ছড়ায়। বিড়ালের মলমূত্রের সরাসরি সংস্পর্শ অথবা মলমূত্র দ্বারা দূষিত খাবার ও পানি থেকে এই জীবাণু মানুষ ও গবাদি পশুতে সংক্রমিত হয়। মহিলারা বাগানে বা ক্ষেতে কাজ করার সময় মাটিতে মিশে থাকা আক্রান্ত বিড়ালের মলমূত্র থেকে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া বাসা বাড়ির আক্রান্ত বিড়ালের মলমুত্র থেকে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। মহিলারা আগে থেকেই আক্রান্ত থাকলে গর্ভধারণকালে তা গর্ভপাত ঘটাতে পারে। আক্রান্ত গবাদি পশুর মাংসে টক্সোপ্লাজমা, সারকোসিস্টিস ও নিওস্পোরার জীবানু সিস্ট আকারে থাকে। এসব সিস্টের মাধ্যমে ঐসব জীবানু মানুষ ও বিড়ালে সংক্রমিত হতে পারে। তবে ভালভাবে সিদ্ধ করে এসব মাংস খেলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা না থাকলেও নাড়াচাড়া করার সময় হাতের মাধ্যমে মুখে চলে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
কৃষক অনেক সময় ক্ষেতের থেকে শাক- সবজি বাজারজাত করার আগে ডোবা, নালা অথবা পুকুরের পানিতে পরিষ্কার করে থাকে, এসব জলাশয়ের পানি দুষিত থাকলে এই জীবাণু শাকসবজির মাধ্যমে বাসস্থানে চলে আসতে পারে। কসাইখানার পরিত্যাক্ত মাংসে জীবাণু থাকলে এবং বিড়াল সেই মাংস খেলে আক্রান্ত হবে এবং পরবর্তীতে জীবাণু ছড়াতে ভূমিকা রাখবে।
টক্সোপ্লাজমার সংক্রমণের ফলে মস্তিষ্কের প্রদাহ, মানসিক বিকারগ্রস্ত, অটিজম শিশুর জন্ম হতে পারে।
ব্রুসেলা মানুষ ও পশুর গর্ভপাতের জন্য দায়ী এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া যা গবাদিপশুর (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও শুকর) মাধ্যমে মানুষে সংক্রমণ ঘটায়। আক্রান্ত প্রাণীর সরাসরি সংস্পর্শ অথবা যেকোনো নিঃসরণ যেমন: দুধ, লালা, মলমূত্র এবং দুষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানুষ ও অন্য প্রাণী আক্রান্ত হতে পারে। ব্রুসেলা ছাড়াও লেপটোস্পাইরা, ক্যামফাইলোব্যাক্টার জীবাণু দ্বারাও গর্ভপাত হয়।
পশুতে গর্ভপাতের জীবাণু সংক্রমণ রোধে করণীয়:
পশুপাখির খামার বা ফার্মের ভিতরে কুকুর, বিড়াল প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। দুধ দোহন এর পর ওলান ও ফার্মের যন্ত্রপাতি পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত রাখতে হবে। ফার্মের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে। মৃত ভ্রূণ ও গর্ভফূলকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। আক্রান্ত ষাঁড়কে প্রজনন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কসাইখানার পরিত্যাক্ত মাংস যত্রতত্র না ফেলে সঠিক স্থানে ফেলতে হবে যাতে কুকুর ও বিড়াল এসব মাংস খেতে না পারে।
মানুষে সংক্রমন রোধে করণীয়ঃ
গর্ভপাতের ফলে বেরিয়ে আসা ভ্রূণ ও গর্ভফুল এবং নিঃসরণ খালি হাতে স্পর্শ করা যাবে না। পোষা বিড়াল ও কুকুরকে সাবধানে রাখতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা (পায়খানা ও রক্ত), কৃমিনাশক ও টিকা প্রদান করতে হবে। কাঁচা মাংস পরিষ্কার করার সময় সাবধনতা অবলম্বন করতে হবে, তবে হাতে গ্লোবস পড়ে কাজ করা সবচেয়ে ভাল। মাংস ও দুধ ভালভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া আবশ্যক।
প্রাণী চিকিৎসকদের জন্য সাবধানতাঃ
ভেটেরিনারিয়ান, কৃষক এবং কসাইখানার কর্মীরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে কারণ তারা সংক্রামিত প্রাণী এবং গর্ভপাত করা ভ্রূণ বা গর্ভফুলের সংস্পর্শে থাকে। তাই এপ্রন, গ্লাভস এবং যথাযথ সতর্কতা নিয়ে প্রাণীর চিকিৎসা করতে হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় টিকা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ জরুরী।